লক্ষ্মীপুর: গৃহবধূ সাবিনা ইয়াছমিনের ঘরে হাঁটু পানি। ঘরের উঠোনে এবং বাড়ির রাস্তায় পানি কোমরের ওপরে।
সাবিনার দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের বয়স সাত বছর, আর ছোটটির বয়স এক বছর। সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন নির্মাণ শ্রমিক। ‘দিন এনে দিন খাই’ অবস্থা তাদের।
বন্যার কারণে আপাতত আয়-উপার্জনহীন তার স্বামী। ফলে চরম অর্থকষ্টে রয়েছে এ নারীর পরিবার।
সাবিনা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ১ নম্বর যাদৈয়া গ্রামের কাদির হাজী বাড়ির বাসিন্দা।
চলমান বন্যা পরিস্থিতি কারণে দুর্দশাগ্রস্ত সাবিনার পরিবার। তার ঘরে চাল নাই। ছোট্ট শিশুটির জন্য পর্যাপ্ত খাবারও নেই। সাবিনাদের বাড়ির আশেপাশে স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ নিয়ে এলেও তারা ঘরে বসবাস না করার ফলে কোনো ত্রাণ পাননি।
উপায় না দেখে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে সাবিনা কোমর পানিতে শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন কোন ত্রাণবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেখা পেতে। স্থানীয় একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ঢুকলে তাদের কাছ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা চান সাবিনা। কিন্তু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য হিসাব করে নিয়ে আসা ত্রাণ ভাগ্যে জোটেনি সাবিনার। এতে মনে ক্ষোভ, হতাশা আর অসন্তোষ নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে এ নারীকে।
সাবিনা বলেন, ‘বাচ্চাদের খাবার দিতে পারি না৷ ঘরে চাল-টাকা কিছুই নাই৷ থাকার জায়গা নাই। কত যে সমস্যা হচ্ছে আমাদের। সব ত্রাণ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে যায়। আমরা পাই ন ‘।
সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় একসপ্তাহ ধরে ঘরে পানি। বাচ্চা দুটা নিয়ে থাকতে পারি না। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা পাইনি, অন্যের ঘরে থাকি। আবার সে ঘরের সামনেও পানি। কোনো ত্রাণ আমরা পাইনি৷ বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি’।
তাদের বাড়ি এবং আশপাশে এ রকম অনেকেই ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে জানান সাবিনা।
একই এলাকার নাসরিন বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার পাশে ঘর। ঘরে হাঁটু পানি। থাকতে পারি না, খাইতে পারি না। আমাদের এদিকে ত্রাণ আসে, কিন্তু আমাদের দেয় না। মুখ দেখে লিস্ট করে নামে নামে ত্রাণ দেয়। আমাদের নাম কেউ দেয় না।
তিনি বলেন, ‘কারো কাছে চাইতে পারি না, কইতেও পারি না, ত্রাণের জন্য যাইতেও পারি না। তাই উপোস থাকি। স্বামী দিনমজুর। এখন তো কাজ নাই, ইনকাম নাই’।
ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা স্বেচ্ছাসেবক বেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকা, প্রত্যন্ত এলাকায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দুর্গম এলাকায় পণ্য পৌঁছাতে স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যাদৈয়া ও মোহাম্মদ নগর এলাকাটি দুর্গম। আমরা এসে দেখলাম এখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। যা মহাসড়কের পাশ থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই। আমাদের পক্ষ থেকে তিনশ পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের বন্যা চরম অবনতি দিকে। জেলাতে প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় নৌযান না থাকায় দুর্গম এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকরাও যেতে পারছেন না। ফলে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা৷ জেলার প্রায় শতভাগ এলাকা পানিতে নিচে তলিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৪
এসআইএস