বরিশাল: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ একটি ভ্যানে স্তূপ করছে পুলিশ।
ভিডিও থেকে লাশের স্তূপ করতে ব্যস্ত এক পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়।
গণমাধ্যম সূত্রে দেশবাসী জানতে পারে, ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানায় গত ৫ আগস্টে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে এবং ভ্যানে তোলা ওই লাশগুলো পুড়িয়ে বীভৎস করে দেওয়া হয়। যাতে লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত না করা যায়।
এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ সদস্য আরাফাত হোসেনের জড়িত থাকায় বিস্মিত তার উপজেলা ও গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, হিজলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা আরিফ সিকদারের বড় ছেলে আরাফাত হোসেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আরাফাত সবার বড়।
আর আরাফাতের বাবা আরিফ সিকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ।
এই তথ্য নিশ্চিত করে আরাফাতের গ্রামের মুন্সি বাড়িতে থাকা স্বজনরা জানিয়েছেন, আরাফাত হোসেন ওই এলাকায় আরজু নামে বেশি পরিচিত।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে আরাফাতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকরা তারা বাবার টিনশেড দোতলা ঘরটির সামনের দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান।
তালাবদ্ধ ঘরের বিষয়ে একই বাড়ির বাসিন্দা ও আরাফাতের মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী সানজিদা বেগম বলেন, তার মেজো ছেলের স্ত্রী একসাথে তিন কন্যা সন্তান প্রসব করেন। তাদের দেখাশোনা করার জন্য প্রায় চারমাস হয়েছে ঢাকায় আছেন তারা।
আর ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে তিনি জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি তিনিও দেখেছেন। যেখানে হেলমেট হাতে পুলিশের ভেস্ট পরা লোকটি হলেন তাদের আরজু (আরাফাত) ভাই।
তিনি বলেন, এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি ১৬ বছর হয়েছে। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকবার বাড়িতে আসতে দেখেছি আরজু ভাইকে। বছর দুয়েক আগে এসে একদিন থেকে আবার ঢাকায় চলে গেছেন। এরপর গতবছরও এসেছিলেন। কিন্তু ওই সময়ে আমি বাবার বাড়িতে থাকায় দেখা হয়নি। এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পরে থেকে তার সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনিনি। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা দেখলাম, তাতে পুরো বিষয়টিতে আরও মানবিক হতে পারতেন সবাই। ভ্যানে ওইভাবে লাশ ওঠানো ঠিক হয়নি।
ওই বাড়িতে বাসিন্দা আরাফাতের নানি সম্পর্কের সুফিয়া বেগম বলেন, ছোট থেকে আরজুকে দেখে আসছি। বলতে গেলে আমাদের কোলেই বড় হয়েছে। এইচএসসি পর্যন্ত হিজলাতেই পড়াশুনা করেছে। তাকে কখনো কোনো খারাপ কাজ করতে দেখিনি। অমানবিক কোনো কাজের যুক্ত হয়েছে বলেও শুনিনি। ভিডিওতে যা দেখেছি তা কোন ঘটনায় কেন করেছে সেই বিষয়ে কিছুই জানি না।
আরাফাতের গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মেমনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি আব্বাস উদ্দিন বলেন, আরাফাত হোসেন গ্রামে আরজু নামে বেশি পরিচিত। আমাদের সিনিয়র বড় ভাই। এইচএসসি পাশের পরে তিনি ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন। তাই এলাকায় যাতায়াত অনেকটা কম ছিল। ভাই এলাকার কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তবে তার বাবা আরিফ স্যার উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ ও ভালো মানুষ হিসেবে হিজলাতে পরিচিত। তিনি হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দায়িত্বে আছেন।
তিনি আরও বলেন, ভিডিও দেখার পর মন ভেঙে গেছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাই হোক না কেন, মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে এভাবে তাচ্ছিল্য করা ঠিক হয়নি। এ ঘটনা দেখে কিছুটা হলেও তার ওপর এলাকাবাসীর শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে।
স্থানীয় নুর মোহম্মদ সর্দার বলেন, পুলিশের চাকরি নেওয়ার পরে তিনি গ্রামের বাড়িতে কম আসতেন। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা থেকে আরজুকে জড়িয়ে আশুলিয়া থানায় এলাকায় ভ্যানে লাশ উঠানো নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে ভিডিও দেখে নিজের কাছেই খারাপ লেগেছে। আরিফ স্যারের ছেলে হয়ে এমন কাজটি কীভাবে করলো? শুধু এই এলাকার মানুষ নয়; পুরো হিজলা উপজেলার মানুষ ওই ঘটনায় লজ্জা পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর, ০১, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ