ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভূমধ্যসাগরে ডুবে মাদারীপুরের ২ ভাইয়ের মৃত্যু 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মাদারীপুরের ২ ভাইয়ের মৃত্যু 

মাদারীপুর: সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৪ মাস আগে মৃত্যু হলেও মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতম উঠে।

এদিকে খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছে দালাল। এ ঘটনায় দালালের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।  

এদিকে একসঙ্গে দুই সন্তানের মৃত্যুর শোক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা মায়া বেগম। তার আহাজারিতে ভারি আশপাশের পরিবেশ। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে আসছেন এলাকাবাসীও। চেষ্টা করছেন সান্ত্বনা দিতে।

জানা গেছে, সাত মাস আগে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পূয়ারী গ্রামের সিরাজ মুন্সীর ছেলে মিলন মুন্সী (৩৫) ও আল আমিন মুন্সী (৩২)। মাঝপথে লিবিয়া গিয়ে তারা অবস্থান করে। পরে ২৭ এপ্রিল লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অর্ধশত মানুষের সাথে ইতালিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দুই ভাই। ভূমধ্যসাগরে পৌঁছালে বহনকারী নৌকাডুবিতে সহোদরের মৃত্যু হয়।  

বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও চারমাস পর ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে তাঁতিবাড়ি এলাকার একইসাথে যাত্রা করা ইস্রাফিল মিয়ার মাধ্যমে মিলন ও আল-আমিনের মৃত্যু খবর আসে পরিবারের কাছে।

স্বজনরা জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর সহজভাবে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেয়। এতে ধারদেনা করে ৩০ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেয় স্বজনরা। একদিকে স্বজন হারানোর শোক, অন্যদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুঃচিন্তায় দুইভায়ের পরিবার। এই ঘটনায় জড়িত দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোবাইলফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে নিহত মিলনের পরিবারের মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। আর আল-আমিনের সংসারে স্ত্রী ও এক বছরের এক ছেলে রয়েছে।

ছেলেহারা মা মায়া বেগম বলেন, ফরহাদ চেয়ারম্যান প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয়। তখন বলেছিল, সুন্দরভাবে আমার দুই ছেলেকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু এভাবে আমার দুই ছেলের মৃত্যু হবে, এটা মেনে নিতে পারছি না। এই ঘটনার বিচার চাই। আর ধারদেনা পরিশোধে সরকারের সহযোগিতা চাই।

মিলন ও আল আমিনের খালা আনোয়ারা বেগম বলেন, একসঙ্গে দুইভাইয়ের মৃত্যু, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল ওই দুই ভাই। দালাল ফরহাদ মাতুব্বর এই ঘটনার জন্য দায়ী, এর বিচার চাই।

সুজন তালুকদার নামে এক আত্মীয় বলেন, দালাল ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর দীর্ঘদিন ধরে এলাকার যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই ফরহাদ মাতুব্বর মানবপাচার চক্রের শীর্ষ সদস্য, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সে। তার কঠিন বিচার দাবি করছি।

ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতালি যাওয়ার পথে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। নিহতের পরিবার থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ  করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাসার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ জানান, মিলন ও আল আমিনের পরিবার থেকে এখনো বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া মানবপাচারের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।