ঢাকা, রবিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক সেবা দেওয়ার পরামর্শ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক সেবা দেওয়ার পরামর্শ

ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানে যেসকল ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবার মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে, যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই ক্ষেত্রে মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের তালিকা তৈরি করে মানসিক সেবা প্রদান করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা ও সঠিক ইকোসিস্টেম নিশ্চিতকরণে সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই মতামত ব্যক্ত করেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইল্ড এন্ড এ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি, মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক, ইয়্যুথ এক্টিভিস্ট ডা. জাহেদুল ইসলাম, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বক্তব্য দেন।

২০১৮-১৯ সালের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের ফল তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ বা দুই কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং এদের ১০০ জনের মধ্যে সাতজনই ভুগছেন বিষণ্ণতায়। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো এর ৯২ শতাংশই রয়েছেন চিকিৎসা সেবার বাইরে। অন্যদিকে ১৩.৬ শতাংশ শিশুও মানসিক রোগে ভুগছে বলে জরিপে উঠে এসেছে, যাদের ৯৪ শতাংশ কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন না।  

এই সংকটের পটভূমিতে নতুন করে প্রভাব ফেলেছে সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময়ে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। যেখানে দেখা যায় আটশত এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় বিশ হাজার মানুষ যাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ তথ্যমতে সারা দেশে কমপক্ষে ৬৭ জন শিশু–কিশোর নিহত হয়েছেন। এছাড়াও কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন ছাত্র জনতার সংখ্যা অনেক। এদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবার মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে, যা স্বল্পমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিরসনে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। সেই সাথে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা করতে পারে সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

প্রস্তাবনা:

১.⁠ ⁠মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে গণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অভিজ্ঞ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো উদঘাটন করে সমাধানের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা।

২.⁠ ⁠জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসকল ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাদের তালিকা তৈরি করে মানসিক সেবা প্রদান করা। আন্দোলনে নিহত বাক্তিদের পরিবারের সদসকে সরকারি/বেসরকারি বাবস্থাপনায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করা (সকল শ্রেণী, পেশার মানুষ ও সংখ্যালঘুরা এর আওতায় পড়বে)

৩.⁠ ⁠প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং মনোবিজ্ঞানী/মনোচিকিৎসক এই দুইয়ের সমন্বয় করে সকল জেলা-উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার তৈরি করা। প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ট্রেনিংয়ের আওতায় এনে দক্ষ জনবলে রূপান্তর করা এবং প্রয়োজনে তাদের মাধ্যমে স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সচল রাখা।

৪.⁠ ⁠স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য ট্রমা রিকভারির কর্মশালা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা।

৫.⁠ ⁠সরকারি উদ্যোগে একটি 'হটলাইন সেবা' চালু করা যার মাধ্যমে সকল অঞ্চলের ছাত্র জনতা মনোবেদনা শেয়ার করতে পারেন এবং প্রয়োজনে কাছাকাছি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

৬. একটি গবেষণা সেল গঠন করা এবং বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহার করে সেবা প্রদান পরবর্তী পুরো সময়ের গবেষণালব্ধ তথ্য জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা।

 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪
এমআইএইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।