পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সিপাইপাড়া বাজারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরে আহতদের উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে থানা পুলিশ ও বিজিবি।
ঘটনার পর পরই পরিস্থিতি বিবেচনায় সাতজনকে আটক করে হেফাযতে নিয়েছে পুলিশ।
আহতরা হলেন- উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সোহরাব আলী (৩৬), আরিফ হোসেন (২৩), হিমেল (৪৯), জাফর আলী (৪৫), আইয়ূব আলী, তিরনইহাট ইউনিয়নের আশিক (২৮), আজিজুল (৪৫), কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকার ফরিদুল ইসলাম (৩২)। এর মধ্যে কয়েকজন সামান্য আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সোমবার সকালে স্থানীয় বিএনপি সমর্থক হোটেল ব্যবসায়ী ওবাইদুল ইসলামের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই খুদা মিলনের সমর্থকরা। এসময় বিএনপির সমর্থকরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১৪ জন আহত হয়। ঘটনার পর আহতদের দেখতে হাসপাতালে যায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা আরও জানায়, এর আগে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিপাইপাড়া বাজারের মাংসের দোকানদার আইয়ুব আলীর সঙ্গে গোরস্থানের জমি নিয়ে বুধারু মুন্সি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে নিয়ে হোটেল ব্যবসায়ী ওবায়দুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয়। আইয়ুব আলী ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনের পক্ষের আর ওবায়দুল ইসলাম বিএনপির সমর্থক।
এদিকে ওবাইদুল ইসলামের লোকজন আইয়ুব আলীর মাংসের দোকান ভেঙে দেয় বলে জানা যায়। এ ঘটনার জেরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদার পক্ষের লোকজন বাজারে থাকা ওবায়দুলের হোটেলে ভাঙচুর করে আগুন দেয়। এর পরপরই অন্যরা তা দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এদিকে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে ঘটনার পরে আহতের দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি দখল, হয়রানি, সিন্ডিকেট ও মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করে আসছিলেন স্থানীয়রা।
বিজিবির বাংলাবান্ধা বিওপি সদস্যরা জানান, ঘটনার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। একই সঙ্গে লাঠি-সোটাসহ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি আহত আরিফ হোসেন বলেন, আমার বাবা বিএনপি করায় আমাদের হোটেল, বাবার এবং আমার ওপর হঠাৎ করে হামলা চালায় মিলন চেয়ারম্যানের লোকজন। তারা আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে এই হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রাশেদ আলী সরকার বলেন, মিলন চেয়ারম্যানের ভাড়াটে লোকজন সিপাইপাড়া বাজারে শোডাউন দিয়ে বেড়াচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা আমাদের লোকজনের ওপরে হামলা করে। তাদের প্রতিহত করতে লোকজন এগিয়ে গেলে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তারা এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন বলছেন, আমি এলাকার বাইরে রয়েছি। সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু জানি না। বিক্ষুব্ধ লোকজন আমার বাড়িতে হামলা ও আগুন দিয়েছে। ঘটনার সময় লুটপাটও হয়েছে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, হামলার খবর শুনে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সাতজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
আরএ