টাঙ্গাইল: সম্প্রতি বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলোচিত মালা খানের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে। তিনি ওই উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা মহাব্বত (ঘাইনঞ্জানি) গ্রামের আবুল ফজল খানের মেয়ে।
বাবার চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় লেখাপড়া করেছেন। চাচা গরু ব্যবসায়ী তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে এলাকায় জমি ক্রয় ও গরু- ছাগল বেচাকেনা করতেন মালা খান। এলাকায় বেশ কয়েকজনকে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিও পাইয়ে দিয়েছেন মালা।
সরেজমিনে অলোয়ার নিকলা মহাব্বত এলাকায় গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান চাকরির পাশাপাশি গরু ও ছাগলের ব্যবসা করতেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও ছাগলের খামার রয়েছে তার। ওই খামার পরিচালনা করতেন তার আপন ছোট ভাই। এছাড়া বসিলাতেই তার জায়গা ও বাসা রয়েছে।
টাঙ্গাইলসহ জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাচা তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে গরু ও ছাগল কিনে মোটাতাজা করা হতো খামারে। এরপর চাচা ও ঢাকার বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে সেগুলো খামারসহ টাঙ্গাইলে এনেও বিক্রি করা হতো। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বসিলার ওই খামার থেকে অনেকেই গরু ছাগল নিয়ে গেছেন।
এছাড়া কয়েক মাস আগেও তার চাচা তোফাজ্জল এক ট্রাক গরু টাঙ্গাইলে নিয়ে বিক্রি করেছেন। এছাড়া কেরানীগঞ্জে তার ভাই মন্তাজ খানের গরুর খামার ছিল। মন্তাজ বছরখানেক আগে মারা গেছেন।
এছাড়া তার চাচার মাধ্যমে এলাকায় ৫৯ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। মালা খান বিআরআইসিএমতে এলাকার বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছেন। তারা এখনও সেখানে বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, মালা খানের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় পড়াশোনা করছেন। তার স্বামী মোস্তফা আনোয়ার একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে তিনি দুই মেয়ের সঙ্গে কানাডায় বাস করছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে স্বামী ও মেয়েদের জন্য কানাডায় বাড়ি কিনেছেন তিনি।
মালা খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রির জাল সনদের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘জালিয়াতির মালা গেঁথেছেন মালা খান’ শিরোনামে ওই সংবাদে ‘জাল সনদ ও নিয়োগ পরীক্ষায় (লিখিত) সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হয়েও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে বলা হয়। ’
এতে আরো বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে মালা খান অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। আর ওই পিএইচডি কোর্সের কো-সুপারভাইজার ছিলেন তার স্বামী মোস্তফা আনোয়ার। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো অনুমোদন। ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি টাকার বিনিময়ে দিয়েছে পিএইচডির সনদ।
নিকলা এলাকার অনেকেই জানান, মালা খান এলাকার অনেককে চাকরি দিয়েছেন যারা বেকার ছিল। তবে টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন কিনা সেটা কেউ বলতে পারেননি। এছাড়া এলাকায় তার চাচা তোফাজ্জলকে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করতেন। তার চাচা ভূঞাপুর শিয়ালকোল হাটের ইজারাদার। চাচাই এলাকায় তাকে জায়গা জমি কিনে দিয়েছেন।
বিআরআইসিএমে চাকরি পাওয়া অলোয়া ইউনিয়নের ঘাইনঞ্জানি গ্রামের সোহান বলেন, কেরানীগঞ্জে জায়গা লিজ নিয়ে তার ভাইয়ের গরু ও ছাগলের খামার ছিল বলে জেনেছি। তবে বসিলাতে ছিল কি না জানি না।
চাচা তোফাজ্জল খান বলেন, আমার ভাতিজি একজন সৎ কর্মকর্তা। অফিসের লোকজনরা তার বিরুদ্ধে লেগেছে। তার অফিসে আয়নাঘর থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে। তার ভাইয়ের খামার ছিল বসিলাতে। আন্দোলনের আগে এক ট্রাক গরু এনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেছি। এলাকায় কিছু জায়গা কিনে দিয়েছিলাম কিন্তু পরে ওই জমি আমি কিনে নিয়েছি।
বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান জানান, ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ৫ আগস্টের পর অফিসে যাইনি কয়েকদিন। এরমধ্যে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, মিথ্যা ঘটনা তৈরি করেছে। এছাড়া তারা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। মিথ্যা ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আইনগত কোনো কিছুই করতে পারবো না। সরকার পতনের পর কয়েকদিন অফিস করেছি। আগে থেকেই ওই কক্ষের বিষয়ে জানতো অফিসের লোকজন। কিন্তু এখন সেটি গোপন কক্ষ নাম দিয়ে প্রচার করছে। মূলত আমাকে অপদস্থ করার জন্যই এমন নাটক সাজিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের গরু ছাগলের খামার ছিল। আমার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় থাকে। আমার স্বামীও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনিও কানাডায় থাকেন।
আগের নিউজের লিংক >> অফিসের ‘গোপন কক্ষ’ নিয়ে মুখ খুললেন মালা খান
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
এসএএইচ