ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খোঁড়াখুঁড়িতে বেসামাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা 

ডিএইচ বাদল, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
খোঁড়াখুঁড়িতে বেসামাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা  খোঁড়াখুঁড়ি ও ড্রেনেজ লাইন সংস্কারের কারণে ভোগান্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা। ছবি: ডিএইচ বাদল 

ঢাকা: উন্নয়নের নামে রাজধানীর ওয়ার্ডগুলোতে ১২ মাসই চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। কোনো সড়ক খোঁড়া হয়েছে পয়োনিষ্কাশনের পাইপ বসানোর জন্য আবার কোনো সড়ক কাটা হয়েছে পানি বা বিদ্যুতের লাইন বসানোর অযুহাতে।

আবার কোনো কোনো ওয়ার্ডে গত ১৫ বছরেও রাস্তার কোনো সংস্কারই করা হয়নি।  

এভাবে একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাস্তাগুলো। এ কারণে ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী এলাকাবাসীসহ পথচারীদের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কদমতলীর জুরাইন মেডিকেল রোড, যাত্রাবাড়ী সায়েদাবাদ,টিকাটুলি, কমলাপুর, মুগদা হাসপাতাল রোড,নারিন্দা, দোয়েল চত্বর, নাজিমউদ্দীন রোড,আগাসাদেক লেন, আগামাসিলেন, নয়াবাজারসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ,ভোগান্তি আর দুর্দশার চিত্রের দেখা মেলে।  

এসব এলাকায় বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাসের পর মাস জমে থাকে ময়লা পানি। চলাচলের সময় কাদার যন্ত্রণা তো আছেই। অতিবৃষ্টির কারণে ডুবে থাকা রাস্তার গর্তে কখনও রিকশা, ভ্যান ও সিএনজি পড়ে গিয়ে আহত হন যাত্রীরা।  

রাস্তায় নিয়মিত জমে থাকে ময়লা পানি।  ছবি: ডিএইচ বাদল

নাজিমউদ্দীন রোডের এলাকাবাসীরা জানান, কয়েক বছর ধরেই রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কবে যে শেষ হবে বলতে পারছি না। বৃষ্টির সময় অনেক ভোগান্তি হয় পথচারীদের। গর্তে পড়ে এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের পা ভেঙেছে।

কদমতলী থানার জুরাইন মুরাদ মেডিকেল রোড, রজব আলী সর্দার রোডে প্রায় ১৫ বছর ধরে কোনো রাস্তা মেরামতের কাজ হয়নি। গত তিন-চার মাস আগে মুরাদপুর হাইস্কুল রোডে রাস্তার ড্রেনেজের কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির করে। প্রায় দুই মাস যাবত এ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার বৃদ্ধ, নারী, শিশু ও শিক্ষার্থীদের জন্য এ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

মুরাদপুর এলাকার বৃদ্ধ আনিসুল হক বলেন, এই এলাকায় দুটি স্কুল, একটি বড় মসজিদ, মাদারাসা ও বাজার রয়েছে। শত শত লোক প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এমনিতেই গত ১৫ বছর রাস্তার সংস্কার হয়নি। এর মধ্যে রাস্তা খুঁড়ে চলাচলে আরও অনুপযোগী করে রেখেছে। আসলে আমরা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়েও কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।

খোঁড়াখুঁড়িতে চলাচলের অনুপযোগী পুরানঢাকার এই রাস্তা।  ছবি: ডিএইচ বাদল

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেনের ময়লা পানিসহ রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমা হয়। আমাদের স্কুল-মাদরাসাপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের দিনের পর দিন এই পানি মাড়িয়ে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। ফলে বারো মাসই অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে।

সায়েদাবাদ এলাকা রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সায়দাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে দৈনিক শত শত বাস দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এই সায়দাবাদ এলাকার রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির দিনে এই গর্তে অনেক যানবাহন পড়ে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

কমলাপুর মুগদা হাসপাতালে দৈনিক হাজার হাজার লোক যাতায়াত করেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয়নি। আরো খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তার অবস্থা বারোটা বাজিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নয়াবাজারের টিন ব্যবসায়ীরা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকার রাস্তাগুলো দেখলে মনে হয় গ্রামের কোনো অজপাড়াগাঁয়ে এসে পড়েছি। আমরা ও ট্যাক্স ভ্যাট দিই, উত্তর সিটির জনগণও ট্যাক্স ভ্যাট দেয়। তারা উন্নত রাস্তাঘাট, উন্নত সেবা পেলেও আমরা পাই না। এই দায়ভার আমাদের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের নিতে হবে।  

ময়লা-আবর্জনার স্তূপে চলাচলের অনুপযোগী রাস্তা।  ডিএইচ বাদল

টিকাটুলির প্রবীণ স্থায়ী বাসিন্দা আজমল সাহেব অভিযোগ করে বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে অসহায়। তারা তাদের মনমতো কাজ করে। যতটুকু জানি, নিয়ম হলো শীত ও বসন্তের মাঝামাঝি সময় উন্নয়ন কাজ করা। কিন্তু এরা মূলত গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। মাঝেমধ্যে দেখি বছরজুড়ে ঢাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে।

রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ বৃষ্টির সময় এলেই রাস্তা, ড্রেনেজ,বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস লাইন সংস্কারের নামে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগের কবলে পড়ে এলাকাবাসী। তাই এলাকাবাসীদের দাবি, যে রাস্তাগুলো খোঁড়াখুঁড়ির অবস্থায় রয়েছে সেগুলো সংস্কার করে নতুন কাজে এগিয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।