সিলেট: অস্বাস্থকর পরিবেশে খাবার তৈরির অভিযোগে সিলেটে সুলতান’স ডাইনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে সুলতান’স ডাইনকে সার্বিক পরিবেশ, খাবারের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছে অভিযানিক দল।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ‘এলাকাজুড়ে মাংসের দুর্গন্ধ, কী খাওয়াচ্ছে সুলতান’স ডাইন?’ শিরোনামে বাংলানিউজ সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর ৪ অক্টোবর ‘দুর্গন্ধ ছড়ানো মাংস সংগ্রহশালায় না গিয়েই সুলতান’স ডাইনের গুণগান করলেন কর্মকর্তারা’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে দাঁড়িয়াপাড়া মেঘনা-বি-৩৩ ইমন হাউজিংয়ে একটি ভাড়া বাসায় করা সুলতান’স ডাইনের ওয়্যার হাউসে যায় অভিযানিক দল। সেখানে ফ্রিজে বিপুল পরিমাণ মাংস সংরক্ষণ থাকলেও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে দেখতে পান। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন বিষয়টি। এছাড়া যত্রযত্র খাবারে ব্যবহৃত কাঁচামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন। এরপর অভিযানিক দল নগরের জল্লারপাড় সুলতান’স ডাইন রেস্তোরাঁ পরিদর্শনে যান। তখন রান্নাঘর পরিদর্শনকালে দেখতে পান ময়লা পানিতে থালা-বাসন পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোনো ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই খালি পা-হাতে এক কর্মচারী পানির টেপের নিচে মাংস ধুয়ে পরিষ্কার করে বাঁশের টুকরিতে রাখছেন। সালাদ বানিয়ে প্লাস্টিকের কৌটায় রাখা। যা ৩০ মিনিটের বেশি রাখা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
প্রতিষ্ঠানটি কেবল বেঙ্গল মিটস থেকে মাংস কেনার কথা বললেও নগরের কাস্টঘরসহ স্থানীয় কসাইদের দোকানি থেকে মাংস কেনার তথ্য প্রমাণ মিলে। এসব মাংস ফ্রিজে রাখলেও লোডশেডিংকালে মাংস ভালো রাখতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আর দেশের বাইরে থেকে বাসমতি চাল ও অন্যান্য কাঁচামাল মজুত থাকলেও আমদানির রশিদ দেখাতে পারেনি। এসব কারণে প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, ‘সুলতান’স ডাইনে যে পানিতে মাংস রাখা হয়েছে সেটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। একইসঙ্গে তারা রান্নার জন্য যে তেল ব্যবহার করছে তাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার পোড়া তেল সরাসরি ড্রেনে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। খাবারের কাঁচামালের আমদানিকারকদের রশিদ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। বেঙ্গল মিটসের পাশাপাশি তারা নগরের কাস্টঘরসহ লোকাল সোর্স থেকে মাংস সংগ্রহ করেন। সেসব মাংস কতখানি স্বাস্থ্যসম্মত তা খতিয়ে দেখতে লোকাল সোর্সগুলো তারা তদারকির আওতায় নেবেন। ঢাকা থেকে বাসযোগে মাংস আনার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন। এসব অপরাধের কারণে তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের সতর্ক করে পাঁচ দিনের মধ্যে পরিবেশ ঠিক করা এবং ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের রশিদ দেখাতে বলা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য নিরপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা সৈয়দ শারাফারাজ হোসেনসহ ভোক্তা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং অভিযানে সহায়তা করেন আনসার সদস্যরা।
এদিকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির ওয়্যার হাউজে পলিথিনে বরফ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দুর্গন্ধযুক্ত মাংস ধরা পড়ার পর সাংবাদিকদের ম্যানেজ করা কর্মরর্তা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, দাবি করেন সুলতান’স ডাইন রেস্তোরাঁর বর্তমান ব্যবস্থাপক (অপারেশন) জুলকার আহমেদ। কথার একপর্যায়ে তিনি অভিযানিক দলের কর্মকর্তাদের ম্যানেজের চেষ্টার কথাও বলেন। তাছাড়া বাসে করে ঢাকা থেকে মাংস সরবরাহকারী লোকটিকেও তিনি চিনেন না বলে দাবি করেন।
মঙ্গলবার রাতে সিলেটের সুলতান’স ডাইনে খাসির মাংস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে যত্রতত্রভাবে বস্তাবন্দি করে খাসির মাংস রাখায় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা গুদামটির খোঁজ করতে গিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পড়া মাংস ধরা পড়ে। এ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ। ওই সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ফুটেজসহ তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য সংগ্রহ করলে তাদের অনেককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
ওইদিন সিলেটের সুলতান’স ডাইনে মাংস সরবরাহকারী ‘মা-বাবার দোয়া’ নামক প্রতিষ্ঠানের মোহাম্মদ সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুলতান’স ডাইনের ২০০/২৫০ কেজি খাসির মাংস ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে বস্তায় ভরে বাসে করে সিলেটের কদমতলীতে আসে। সেখান থেকে কয়েকজন গিয়ে নিয়ে আসি। পরে মাংসের সাইজ করে সুলতান’স ডাইনে সাপ্লাই দিই। তবে ওইদিন সেগুলোতে এত দুর্গন্ধ থাকার কারণ সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) অনিয়ম খতিয়ে দেখতে যান সিটি করপোরেশনের স্যানেটারি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের চার কর্মকর্তা। তারা অভিযোগ ওঠা ওয়্যার হাউজে না গিয়ে সুলতান’স ডাইনের রেস্তোরাঁয় গিয়ে পক্ষে সাফাই গেয়ে আসেন। সিসিকের পরিদর্শক দলের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ।
বক্তব্য দেওয়া সিসিকের পরিদর্শন টিমের স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষণ পাল ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, তাদের অগোচরেই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ তাদের কথা বলিয়ে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছে। মূলত তাদের বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার নেই। নিজেদের বক্তব্য দেওয়াকে ভুল স্বীকার করেছেন তারা। সুলতান’স ডাইনের এহেন কাণ্ডে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২৪
এনইউ/এএটি