ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নলছিটিতে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৪
নলছিটিতে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির নলছিটিতে দুর্নীতি আর অনিয়মের মধ্য দিয়েই চলছে উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদ আরা শাওনের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছেন না।

 

তিনি নলছিটিতে যোগদানের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ কৃষকরা। তিনি কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নিয়ে লুটপাটের এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এসব ঘটনায় গত এক সপ্তাহে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে কয়েকটি অভিযোগ করেছেন উপজেলার শতাধিক কৃষক।  

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, পার্টনার প্রকল্পের বোরো মৌসুমে কৃষক স্কুলের কৃষকদের জনপ্রতি ১০টি করে ক্লাসের ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের ৫টি ক্লাসের ভাতা দেওয়া হয়েছে। নাস্তার জন্য বরাদ্দ থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা তা আত্মসাৎ করেছেন। পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পে বছরে ৩৫০টি বরাদ্দ থাকলেও উপজেলার কৃষকদের মাঝে মাত্র ১১০টি পুষ্টি বাগানের বরাদ্দ দেওয়া হয়। পুষ্টি উন্নয়ন নামে আরেকটি প্রকল্পে পুষ্টি গ্রামে ৭৮টি বাগান দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা ২৫টি বাগান বরাদ্দ দিয়েছেন। লেবু জাতীয় ফসল প্রকল্পের রবি মৌসুমে বাগানের বরাদ্দ এলেও তিনি কোনো বাগান না দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কৃষকদের আন্তঃপরিচর্যা বাবদ যে টাকা বরাদ্দ তা তিনি দেননি। মালামালও কম দিয়েছেন।

এসএসিপি প্রকল্পের সিএফসি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে তিনি দুর্নীতি করেছেন। যন্ত্রপাতিতে সরকার থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও তিনি খরচ করেছেন ৭০ হাজার টাকা। ছয়টি সিএফসিতে যন্ত্রপাতি দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তিনটিতে দিয়েছেন। কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণেও তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। নামে-বেনামে যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়ে কোম্পানিকে ভর্তুকির টাকা আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। আরো কয়েকটি প্রকল্পে কৃষকদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া টাকা তিনি লোপাট করেছেন।  

প্রণোদনা কর্মসূচি পরিচালনায়ও রয়েছে অনিয়ম। এ কর্মসূচিতে ধান ক্রয়ের যে বিধান আছে তার অপব্যবহার করে নিম্নমানের হাইব্রিড ধান সস্তায় কিনে কৃষকদের দিয়েছেন। প্রণোদনার ধান ও সার কৃষকদের না দিয়ে তা তিনি বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দিয়েছেন। আবার কৃষকদের মাঝে প্রদর্শনীর বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তা বরাদ্দ দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে বরাদ্দকৃত মালামাল বিতরণ না করে ভুয়া মাস্টার রোল করেছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন কাজ ও পরামর্শের জন্য কৃষকরা তার অফিসে গেলে কৃষি কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ ও ব্যবহার করেননি। তার স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন; এ কথা বলে বিগত সরকারের আমলে সবাইকে ভয় দেখাতেন।  

এদিকে এই দুর্নীতিগ্রস্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদ আরা শাওনকে দ্রুত অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার কৃষক ও কৃষাণীরা। কৃষি কর্মকর্তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ না করা হলে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান তারা।  

নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদ আরা শাওন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অফিসিয়ালভাবে জানি না। তবে কেউ একজন আমাকে দেখিয়েছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আমাকে এই কর্মস্থল থেকে বদলির আদেশ শুনিয়েছেন। আমাকে চলে যেতে হবে। বদলি যেহেতু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হচ্ছে সেহেতু আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।