ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে ‘পলো বাওয়া উৎসব’ দেখতে মানুষের ঢল

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
ফরিদপুরে ‘পলো বাওয়া উৎসব’ দেখতে মানুষের ঢল

ফরিদপুর: গ্রাম বাংলার পুরোনো ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে ‘পলো বাওয়া’ (পলো দিয়ে মাছ ধরা)। একসময় গ্রাম এলাকাজুড়ে বর্ষা মৌসুম শেষে শীতকে উপেক্ষা করে বাঁশ দিয়ে তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা ও খালবিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ‘পলো বাওয়া’ উৎসব।  

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সকালে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর বিলে আয়োজন করা হয় ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। আর এতে অংশ নেনে কয়েক হাজার শৌখিন মাছ শিকারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুব ভোরেই আদমপুর বিলে হৈ হৈ করে একসঙ্গে পলো-জাল হাতে মাছ শিকারে নেমে পড়েন সবাই। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো বাওয়া। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে আশেপাশের গ্রামের নানা বয়সের লোকজন; শিশু থেকে বৃদ্ধ যে যার মতো উৎসবে মেতে উঠেন। কেউ আবার জাল থেকে মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। নানা প্রজাতির মাছ ধরে হাসিমুখে ফিরতে দেখা যায় শৌখিন মাছ শিকারিদের।

স্থানীয়রা জানান, একসময় পলো দিয়ে মাছ শিকারের অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতো গ্রামের ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ। কম বেশি প্রায় সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো। আর সেই মাছ দিয়ে পরিবারের সবার আনন্দের সঙ্গে রান্না করে খেতেন। কিন্তু সেই বাংলার ঐহিত্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নেই নদী-নালায় পানি, যতোটুকু আছে সেখানে অসাধু মাছ শিকারিরা চায়না দুয়ারি, কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে ছোট মাছ গুলো মেরে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করছে। তবে এবার মাছ ধরার সেই ঐতিহ্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ফরিদপুর সদরেরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর এতে কয়েক হাজার শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল শুক্রবার সকাল ৮টায় আদমপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হবে। এ সংবাদে কয়েকটি গ্রাম থেকে শৌখিন মাছ শিকারির ভোর থেকে জড়ো হয় বিল পাড়ে। ‘উন্মুক্ত জলাশয়ে ভেসাল, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি চাই না’ স্লোগানে এ উৎসব দেখতে জড়ো হয় আশেপাশের গ্রামের নানা বয়সী মানুষ।  

মাছ শিকারি ও উৎসুক একাধিক জনতা জানায়, যান্ত্রিক যুগে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পলো দিয়ে মাছ ধরার গল্পকে। আজ এই উৎসবের মধ্য দিয়ে শৈশবকে ফিরে পেলাম।

আয়োজকরা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল বা চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশীয় মাছের বংশ ক্রম ধ্বংস করতে পারতো না। কিন্তু, প্রশাসনের আন্তরিকতা না বাড়ালে এক সময় দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ শিকারের মতো নানা উৎসব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।