সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে গেছে #WeAreNahid (আমরাই নাহিদ) হ্যাশট্যাগে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও সরকার পতনের ডাকের ঘোষক নাহিদ ইসলামের পক্ষে ট্রেন্ড হয়েছে এই হ্যাশট্যাগ।
কেন এই হ্যাশট্যাগ?
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে আলোচনার শিরোনাম হয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিক্ষককে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) পরিচালক নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। নিয়োগপত্রে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সুপারিশসহ সই করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চলমান হল আন্দোলনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
জবির এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়- ‘কোনো নাহিদ ভাই মানি না। ’ শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলেও স্লোগান দেন। এ সময় নাহিদ সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কয়েকজনের সঙ্গে তিনি খুব শান্তশিষ্টভাবে কথাও বলেন।
পরবর্তীতে এনআইবি পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে নাহিদকে নিয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে বলে শোনা যায়।
এসবের প্রতিবাদে ‘আমরাই নাহিদ’ ট্রেন্ড শুরু হয় ফেসবুকে। নাহিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সহযোদ্ধা, অ্যাক্টিভিস্টসহ নেটাগরিকরা।
নাহিদের বিরুদ্ধে কারা চালাচ্ছেন অপপ্রচার?
একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাহিদকে নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছেন। সাংবাদিক মো. জুবাইর মনে করেন, পতিত গোষ্ঠীর লোকজন সুযোগ সদ্ব্যবহারে করতে চাইছে। জনগণ যখন অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিয়েছে তখন শেখ হাসিনার দোসররা এমন হীন কাজ করার চেষ্টা করছে।
বিষয় দুটি নিয়ে নাহিদকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থনকারীরাও। যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামকে নিয়ে অপপ্রচারের জবাবে ফেসবুক জুড়ে লাল ছবিতে হ্যাশট্যাগ উই আর নাহিদ ট্রেন্ড শুরু হয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীসহ অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ও শুভানুধ্যায়ীরা নাহিদের পাশে দাঁড়ান।
তা ছাড়া মঙ্গলবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন নাহিদ ইসলামও। তিনি লেখেন- ‘১৫ অক্টোবরের নিয়োগ ২২ অক্টোবরই বাতিল করা হয়েছিল। সুপারিশকৃত গোপন নথির ছবি যারা পেয়ে যায় তাদের কাছে বাতিলকৃত প্রকাশ্য নোটিশটি অজানা থাকার কথা না। তারপরও যেকোনো মূল্যে অসত্য প্রচার করে বিতর্কিত করাটা এই সময়ের রাজনীতি।
মূলত আওয়ামী বিরোধী ও আন্দোলনের পক্ষের একটি গ্রুপ এই ব্যক্তির সুপারিশ করেছিল। পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা উনার একাডেমিক এক্সেলেন্সি দেখে এনআইবি পদে নিয়োগ দেন। কিন্তু ঐ ব্যক্তির রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পরে সঙ্গে সঙ্গেই উনার নিয়োগ বাতিল করা হয়। গত মাসের ঘটনা। বাতিল করার ঘোষণাটিও সকলে অবগত আছেন।
নাহিদকে সমর্থন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আবু সাদিক কায়েম লিখেছেন, ‘আমরা জুলাইয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলাম। নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ যেহেতু ফ্রন্টলাইনে ছিল ফ্যাসিস্টের প্রথম টার্গেটও তারাই এবং এখনো আছে। তাদের নিবেদিত লড়াই— নিশ্চিত কাঠগড়া কিংবা মৃত্যু জেনেও আপোষহীন রাজপথ আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত করেছে। মানুষ সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ছাত্র নেতৃত্ব এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি যেটার জন্য হেনস্তার শিকার হতে হবে। আমরা চাই— রাষ্ট্রের ইতিবাচক সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক মীমাংসা। ছাত্র নেতৃত্ব আস্থা হারানোর মতো কোনো সিদ্ধান্তও নেয়নি। ’
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সারজিস। লেখেন- ‘নাহিদ আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই রাজপথে নেমেছিল। DGFI, DB'র পাশবিক অত্যাচার, কোনো কিছুই এদের টলাতে পারেনি। হাসনাতরা আরও ৩ মাস আগেই বলেছিল 'we are open to be killed'.
মাহিন সরকার, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশিদ, হান্নান মাসুদদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। শেখ হাসিনার পুরো রেজিমের ভয় এদেরকে লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লোগান ওদের পূর্ববর্তী করাপ্টেড সিস্টেম নিয়ে ছিল সেটা বুঝেছি। সহযোদ্ধাদের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে সেটা নিয়েও সমস্যা নেই। ন্যায়ের পক্ষে রাজপথের লড়াই সংগ্রাম মিনিটের মধ্যে আবার অমাদের ঐক্যকে শক্তিশালী করবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। যখনই সংকট এসেছে আমার এই সহযোদ্ধারাই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছে।
কিন্তু এজেন্ট হিসেবে ভিতরে ঢুকে এদের কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নোংরা প্রচেষ্টা যদি করা হয় তবে সেটা কখনো সফল হবে না। এই বন্ধন এমনি এমনি তৈরি হয়নি। হাতে হাত রেখে রাজপথে ঘাম ঝড়িয়ে, রক্ত ঝড়িয়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে একসাথে লড়াই করে এই বন্ধন তৈরি হয়েছে। সাবধান!’
সকালে সালমান মুক্তাদির ‘#WeAreNahid’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘এই যে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারছো, অভিযোগ করতে পারছো, নিজের প্রোফাইল থেকে সব শেয়ার করতে পারছো, প্রশ্ন করতে পারছো। এইটা ভুলে যাইয়ো না। লাইফে কোনও দিন পারো নাই। এই প্রথম পারছো, ভুলে যেও না। অভিযোগ করো, অবশ্যই করবা। কেন করবা না। কিন্তু তুমি এই রেভ্যুলুশনকে কোনও দিন ইগনোর করতে পারবা না। অস্বীকার করতে পারবা না। ইন অল অনেস্টি। আমি নাহিদকে চিনিও না, জানিও না। কিন্তু আমি খুব ভালো করে জানি আমি অথবা আমরা কয়েকশ মানুষ আজকে বেঁচে আছি ওদের মত মানুষের সেক্রিফাইজের জন্য। উইথ আউট দেম, হাফ অব আস উড হেব বিন ভ্যানিশড বাই নাউ। এইটাও অস্বীকার করার কোনও স্কোপ নাই। ’
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি লিখেছেন, ডিবি অফিসে পিছন সাইট লাল নাহিদ ভাইয়েরই হয়েছিল। ডিবি হারুনের বানানো স্ক্রিপ্ট প্যান্ট পরেও পড়তে পারেনি সে। লুঙ্গি পরে পেপার হাঁটুর উপরে রেখে বানানো স্ক্রিপ্ট পড়েছিল নাহিদ ইসলাম।
ছাত্র আন্দোলনে অ্যাক্টিভিস্ট আশরেফা খাতুন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বড় ভাই নাহিদ ইসলামকে ভরসা করি। ভাইয়ের ভুলত্রুটির সমালোচনা আমরাই করবো, কিন্তু ষড়যন্ত্র করতে দেব না কাউকে। আমি যদি এই আন্দোলনে কাউকে সামনে থেকে দেখে সাহস পেয়ে থাকি সেটা নাহিদ ভাই। পূর্ণ আস্থা রাখছি উনার উপর।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এমজে