মৌলভীবাজার: শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী মহারাস উৎসব। প্রাণের উচ্ছ্বাস আর খোল-করতাল, শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে চলে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ভোর পর্যন্ত চলে এই মহারাস উৎসব। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় এ উৎসব উদযাপিত হয়। রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের মধুর লীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলেন শিল্পীরা।
রাস উৎসবে আয়োজকেরা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও মণিপুরীদের পৃথক দুই গ্রামে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ১৮২তম এবং আদমপুরে মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ সম্প্রদায়ের ৩৯তম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা গেছে, মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আয়োজকেরা আরও জানিয়েছেন, রাখাল নৃত্যের মাধ্যমে রাস উৎসবের শুভ সূচনা হয়ে একটানা বিরতিহীন নাচ করবেন শিল্পীরা।
মহারাসলীলার মূল উপস্থাপনা শুরু হয় দুপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হয়। রাখালনৃত্যে রাখাল সাজে শ্রীকৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। সন্ধ্যার সময় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। রাত ১১টায় পরিবেশিত হয় মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা। আর এই উৎসব উপলক্ষে মণিপুরি ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্যসামগ্রী ও খাবারের পসরা সাজিয়ে মেলা বসে। লোকজনের কেনাকাটা, গল্পগুজব, খাওয়া-দাওয়া চলতে থাকে।
মহারাত্রীর আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠে কমলগঞ্জের মণিপুরী অধ্যুষিত জনপদ।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উৎসব শুধু মণিপুরীদের জন্য নয়, রাস দেখতে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন। এই উৎসবকে ঘিরে মণিপুরি প্রতিটা পরিবার এক মাস থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। এই উৎসব মনিপুরীদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
বিবিবি/এএটি