মাদারীপুর: যাত্রাবাড়ি-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের মধ্যে গতিসীমা মেনে চলার প্রবণতা না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা। এদিকে মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিত থ্রি-হুইলার চলাচল, মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতিতে চলাচলসহ চালকদের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছেই।
জানা গেছে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যাত্রাবাড়ি-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ও মাদারীপুর-শরিয়তপুর মহাসড়কে চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। সরকারি আইন মানছেন না চালকেরা। ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে অকালে প্রাণ হারানোসহ পঙ্গুত্ববরণ করছেন অসংখ্য মানুষ। তবে চালকদের দাবি, মহাসড়কে তিনচাকার যানবাহন এবং বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কগুলোতে প্রতিদিন সহস্রাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করে। একদিকে ওভারলোড, অন্যদিকে হেলমেট ছাড়াই ইচ্ছেমতো মোটরসাইকেল চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্করা। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে গত ২২ অক্টোবর মোটরসাইকেলযোগে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনবন্ধু পার্থ শীল, তন্ময় দাস ও সীমান্ত। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের বন্দরখোলায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারা যান পার্থ ও তন্ময়। গুরুতর অবস্থায় সীমান্তকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলে। এরপর গত ৩ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে এক্সপ্রেসওয়ের জাজিরা টোলপ্লাজার কাছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আরও চার তরুণের।
এদিকে ১৬ নভেম্বর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর সংলগ্ন এলাকায় মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় আহত হন চিত্রনায়ক রুবেল ও তার আট সহযোগী। বেপরোয়া গতি থাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সমাদ্দারে ঘটে এ দুর্ঘটনা। বার বার এমন দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ যাত্রী ও পথচারীরা।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘণ্টায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৮০ কিলোমিটার, মহাসড়কে ৬০ ও আঞ্চলিক সড়কে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে গাড়ি চালানোর বিধি রয়েছে। অথচ দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে মোটরসাইকেল। তাছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্করাই অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে থাকে। ফলে ঘটছে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা। এদিকে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে ৭২টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৪ জন; আহত হয়েছেন ৭৮ জন, মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫টি। জাজিরা-ভাঙ্গা অংশে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত ও ৯৪ জন আহত হয়েছেন; মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫টি। এরমধ্যে গত বছরের ১৯ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুরের ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন। আহত হন আরও ২৫ জন।
মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক চালক জানায়, চালকদের অসচেতনতার কারণেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এছাড়া অনেক সময় চালকদের প্রতিযোগিতার ফলে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোনো মৃত্যু চাই না, এর স্থায়ী প্রতিকার চাই। যারা ড্রাইভিং করে তাদেরও ভুল আছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় তিনচাকার যানবাহন চলাচলের কারণে। মহাসড়কে যে পরিমাণ তিনচাকার যানবাহন চলে, তারা কোনো নিয়ন্ত্রণ মানে না। এজন্য পরিবহন চালকদেরও সমস্যা পড়তে হয়।
মাদারীপুর অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের মোস্তফাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনারোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। গতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিং হচ্ছে, মামলাও হচ্ছে। শুধু মামলা দিয়েই এই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার পরিবহন চালকসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
এসএম