লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর শহরে একটি ওয়াজ-মাহফিলের অনুষ্ঠান পণ্ড হওয়াকে কেন্দ্র করে দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা চলছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে দাওয়াত না দিয়ে মাহফিলে কেন্দ্রীয় জামায়াতে নেতা ড. রেজাউল করিমকে প্রধান অতিথি করায় বিতর্ক দেখা দেয় বলে খবর প্রচার করে কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল।
জানা যায়, মাকছুদুর রহমান আলমগীর নামে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে মাহফিলের প্যান্ডেল খুলে দেওয়া হয়, বিদ্যুতের সংযোগ ও মাইকের তার কেটে দেওয়া হয়। এতে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মো. মাহবুবুর রহমান ও মাহফিল আয়োজন কমিটির সদস্য জামাল উদ্দিন কবির ও আহছান হাবিব জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর কমিশনার বাড়ির সামনে মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল ও ইসলামী সংগীত সন্ধ্যার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে আলমগীর কমিশনার এসে মাহফিল বন্ধ রাখার জন্য বলেন। এ্যানি চৌধুরীকে দাওয়াত না দেওয়ায় তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার (আলমগীর) দাবি ছিল, এ্যানি চৌধুরী তাকে ফোনে জানিয়েছে মাহফিল বন্ধ করে দিতে।
তবে মাহফিল বন্ধের কোনো নিদের্শনা বিএনপি নেতা এ্যানি চৌধুরী দেননি বলে জানিয়েছেন মাকছুদুর রহমান আলমগীর। তিনি ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
মাকছুদুর রহমান আলমগীর বলেন, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী। মাহফিলে রেজাউলকে অতিথি করা হয়। এছাড়া এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে প্রতিবছর দাওয়াত দেওয়া হয়। এবার আমাকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। আমি যেহেতু বিএনপির রাজনীতি করি। এজন্য আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতো। তখন কে বা কাকে রাখা যায় তা নিয়ে সমন্বয় করা যেত। এ্যানি চৌধুরী ও রেজাউল করিমকে দাওয়াত দেওয়া যেত। আমি এসব বলেছি। তবে মাহফিলের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছি। এ্যানি চৌধুরী মাহফিলের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এনিয়ে তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে তার বাড়ির সামনেই মাহফিলের নামে ‘রাজনৈতিক’ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
এদিকে মাহফিলটি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় জামায়াত এবং স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে। তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বিএনপি নেতা আলমগীরকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে দ্রুত এ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে জেলাব্যাপী।
এমন আবহে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাতেই বিএনপি ও জামায়াতে দুই নেতা তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পৃথক বিবৃতি দেন।
এ্যানি চৌধুরী ও রেজাউল করিম দুজনেই মাহফিলে অতিথি কিংবা পণ্ড হওয়ার বিষয়ে পূর্বে থেকে অবগত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
শুক্রবার রাতে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডে একটা মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে আমাকে দাওয়াত না করায়। এই মর্মে কিছু অনলাইন পোর্টাল সত্যতা যাচাই না করে মিথ্যা নিউজ প্রচার করে। যা আমার ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রের অংশ। এই মাহফিল সম্পর্কে আমি ন্যূনতম অবগত নই। এই নিউজ প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করছি।
একই রাতে ফেসবুক পেজে বিবৃতি দেন জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিম। তিনি উল্লেখ করেন, লক্ষ্মীপুর ১১ নং ওয়ার্ডে মেহমানকে কেন্দ্র করে মাহফিল বন্ধ! এ নিউজ আমার দৃষ্টিতে এসেছে। এই মাহফিলে আমাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে সে সম্পর্কে আমি অবহিত ছিলাম না। বরং মাহফিলের মেহমান হিসেবে উপস্থিত থাকার দাওয়াত পেয়েছি। ওয়াজ মাহফিলে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারাটাই বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমার অন্য ব্যস্ততার কারণে এই মাহফিলে উপস্থিত থাকতে পারবো না, তা আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া আমি মনে করি ওয়াজ মাহফিলের সম্মানিত প্রধান অতিথি, বক্তা ওলামায়ে কেরাম হবেন এটাই ওয়াজ মাহফিলের সৌন্দর্য। তাদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান সকলেই শুনবে এবং ইসলামের আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সাজাবে। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথ রচনা করবে এটাই হওয়া উচিত। আমি মনে করি, যে বা যাদের ভুলের কারণে কোরআনের একটি পবিত্র মাহফিল বন্ধ হয়ে গেল তা সত্যিই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। যারা এই মাহফিল শোনা থেকে বঞ্চিত হলেন এর দায় কে নেবে? যে সমস্ত সম্মানিত উলামায়ে কেরাম অতিথি ছিলেন তারাও বা আমাদের সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করবেন? আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
এসএএইচ