ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহী মহিলা কলেজ: ছাত্রী বাড়লেও সংকট কাটেনি

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১২
রাজশাহী মহিলা কলেজ: ছাত্রী বাড়লেও সংকট কাটেনি

রাজশাহী: রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ। শহরের মধ্যমণি হিসেবে পরিচিত কাদিরগঞ্জ এলাকায় এর অবস্থান।

তবে রাজশাহীর একমাত্র সরকারি মহিলা এ কলেজটিতে বিরাজ করছে ভয়াবহ আবাসন সংকট।

সময়ের ধারাবাহিকতায় কলেজটিতে ছাত্রী সংখ্যা বাড়লেও সংকট কাটেনি। শুধুমাত্র আবাসন সমস্যার কারণেই ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো ছড়াতে পারছে না।   ব্যাহত হচ্ছে পড়ালেখা। তবে সীমিত সুযোগেও শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে পড়ালেখা-খেলাধুলাসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে এর শিক্ষার্থীরা প্রতিভার স্বাক্ষর রাখায় এখানে মেয়েদের ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। তাই ছাত্রীসংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই।

প্রথমে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে স্নাতক (পাস) কোর্স চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি ও অর্থনীতি, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে দর্শন, ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ইতিহাস এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স  চালু হয়।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেসমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে পদার্থ, রসায়ন, প্রাণী বিদ্যা, গণিত ও গার্হস্থ অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক সম্মান কোর্স চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ লক্ষে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল কলেজ পরিদর্শন করে গেছেন। ফলাফলও ভালো।

২০১২-১৩ শিক্ষা বর্ষে সম্ভব না হলেও ২০১৩-১৪ শিক্ষা বর্ষে এ বিষয়গুলিতে স্নাতক সম্মান পাঠদান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়ী শিক্ষায় আসন সংখ্যা ১ হাজার ২০০টি। পাশাপাশি স্নাতকে (সম্মান) সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা ৭১৫টি। বর্তমানে এখানে ৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে নেই পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন। কলেজটির মাত্র দুইটি ভবন রয়েছে। এর একটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং মাত্র ৩০টি কক্ষ নিয়ে তৈরি অন্য ভবনটিতে কোনো রকমে পাঠদান চলছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা।

কলেজের দর্শন ২য় বর্ষের ছাত্রী সবিতা বাংলানিউজকে বলেন, “প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ছাত্রীর বিপরীতে ১৭০ আসনের মাত্র একটি ছাত্রী নিবাস রয়েছে। এখানে গাদাগাদি করে প্রায় ৪ শতাধিক ছাত্রী অবস্থান করেন। বাকিরা কলেজের আশপাশের বিভিন্ন মেসে ভাড়া থাকেন। ”

এসব কারণে একদিকে কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীরা কাংক্ষিত ফলাফলে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এছাড়াও কলেজটিতে বিরাজ করছে শিক্ষক সংকট। ৭৩ পদের বিপরীতে বর্তমানে শিক্ষক-প্রদর্শক রয়েছেন ৫২ জন। তৃর্তীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদেরর বিভিন্ন পদও পরে আছে খালি।

বর্তমানে ১১ পদের বিপরীতে ২ জন তৃতীয় এবং ২২ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ১৫ জন। তবে কয়েক দশক ধরে ২০ জন মাস্টাররোল কর্মচারী দিয়ে কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন, কলেজের প্রফেসর সৈয়দা নিলুফার ফেরদৌস।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান সরকার বাংলানিউজকে বলেন- “সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণের ঘোষণা দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ”

তবে এ নিয়ে সরকারের উপর মহলে দেনদরবার চলছে বলেও তিনি জানান। এটি হলে আবাসন সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং কলেজের শিক্ষার পরিবেশও উন্নত হবে।

এক নজরে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ
নারী শিক্ষার অগ্রগতির লক্ষে শিক্ষানুরাগী আয়েন উদ্দীন, শাহ আবদুল গোফুরসহ বেশ কয়েকজনের অগ্রগামী প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকারি কলেজের ১২ জন ছাত্রীসহ মোট ২০/২২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু হয়। জমির পরিমাণ ছিলো প্রায় ১০ একর।

তবে এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাকাল হিসাব করলে আরও পেছনে যেতে হয়। ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার মৌলভী ওসমান গণি ও কতিপয় শিক্ষিত ব্যক্তি পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের দোতলায় ১৯৫৭ সালে ‘রাজশাহী মহিলা কলেজ’ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

কিন্তু ১৯৬০ সালে ছাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং বতর্মান রাজশাহী মহিলা কলেজকে তারই সংস্করণ বলা যেতে পারে। ১৯৬৮ সালের ২৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারি হয়।

কলেজে কলা ও বিজ্ঞান শাখা চালু আছে । বাংলা, ইংরেজি,  রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দর্শন ও  অর্থনীতিতে অনার্স পাড়ানো হয়। এইচএসসি, ডিগ্রি ও অনার্স মিলে ছাত্রী সংখ্যা ৬ সহস্রাধিক। ৩ জন অধ্যাপক, ৮ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১৫ জন সহকারি অধ্যাপক, ২৩ জন প্রভাষক, ২ জন প্রদর্শক, ১ জন শরীরচর্চা শিক্ষক ও ১ জন গ্রন্থাগারিক রয়েছেন।

কলেজে বর্তমানে একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। এতে মোট ১৭০টি সিটে গাদাগাদি করে থাকছেন ৪ শতাধিক ছাত্রী। কলেজে একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বি.এন.সি.সি, রোভার স্কাউট ও রেঞ্জার রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১২
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।