ঢাকা, বুধবার, ০ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পুরান ঢাকায় আমেজহীন সাকরাইন উৎসব

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
পুরান ঢাকায় আমেজহীন সাকরাইন উৎসব সাকরাইন উৎসবে লাল হয়েছিল আকাশ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত একটি লোকজ উৎসব সাকরাইন। প্রতিবছর ঢাক-ঢোলের সুর, উড়ন্ত পটকা আর রঙিন ঘুড়ি দিয়ে সাকরাইন উৎসবে মেতে ওঠে পুরান ঢাকাবাসী।

কিন্তু এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বিগত বছরগুলোর মতো জাঁকজমকের দেখা মেলেনি এবার। ঘুড়ি-নাটাই আর সুতার বেচাকেনাও হয়েছে কম।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ, ধূপখোলা ঘুরে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে তেমন আমেজ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে দোকানে দোকানে আগের মতোই নানা রঙের, নানা আকারের ঘুড়ি, নাটাই, সুতা দেখা গেছে। তবে এসব দোকানে ভিড় ছিল কম।

উৎসবে স্থান পেয়েছে পতেঙ্গা, পঙ্খিরাজ, চোখদার, বোয়াদার, গায়েল, নাগপান্দার, মাছ, নোমাইলদার, বলদার, পেটকাদার, যাইবাচ্চা, টেকা, গরুশিং, রগগুডিসহ বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি। ছিল প্লাস্টিকের ঘুড়িও। এগুলো পুরান ঢাকার অলিগলিতে বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে। সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৫০০ টাকায় ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে।

এদিন বাসাবাড়ির ছাদকে সাজানো হয় বাহারি রঙের আলোকসজ্জায়। ছাদের ওপর শিশুদের মেলা, আছে বড়রাও। তাদের সবার হাতে নাটাই ও ঘুড়ি। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয়েছে পিঠা। কিছু কিছু বাড়ির ছাদে করা হয়েছে ডিজে পার্টি। ঘুড়ি ওড়ানোর সময় ঘুড়ি কেটে গেলে চিৎকার আর হাসাহাসি, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন মিলে সে এক বিশাল উল্লাস। এ যেন এক মেলবন্ধন। দিনশেষে সূর্য ডুবতেই হাজার হাজার ফানুস ও আতশবাজি ফুটতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানায়, একসময় পৌষের শেষে জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি ওড়ালে ঘটা করে সেসব দেখতেন সবাই। এখন এটা আর হয় না। তবু ঘুড়ি ওড়ানো পৌষ বিদায়ী উৎসবের অংশ হয়ে আছে।

শাঁখারী বাজারের গোপাল স্টোরের মালিক সুজিত কর বলেন, আগের তুলনায় এবার বিক্রি কম। কয়েক হাজার ঘুড়ি অর্ডার দিয়েছিলাম। যা এসেছে তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। আগের মতো ছেলেরা সাকরাইনে ঘুড়ি উড়ায় না। এরা গান বাজায়। বাজি ফুটায়। এবার সেটাও কম। সাকরাইনের সাথে পঞ্জিকার একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি পঞ্জিকার একদিন আগে বা পরে হয় সাকরাইন। এই দ্বিধার কারণেই এবার সাকরাইনের আমেজ কম।

বন্ধুর বাসার ছাদে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া সবুজ। বিকাল পর্যন্ত সে ৩টি ঘুড়ি কেটেছে। অন্যরাও তার ঘুড়ি কেটেছে কয়েকবার। এবারের ঘুড়ি উৎসবের জন্য সে ১০টি ঘুড়ি কিনেছে। তার সবচেয়ে পছন্দের ঘুড়ি পতেঙ্গা।

ঘুড়ি উৎসব দেখতে মিরপুর-১০ থেকে ধূপখোলা মাঠে আসেন সাগর-শিমলা দম্পতি। প্রতিবছরই ঘুড়ি উড়ানো দেখতে আসা হয় তাদের। ঘুড়ি কিনে নিজেরাও উড়ান। এ বিষয়ে সাগর বলেন, আমি গ্রামের ছেলে। চাকরিসূত্রে ঢাকা থাকছি। গ্রামের বিলে কত যে ঘুড়ি উড়িয়েছি তার হিসাব নেই। নিজ হাতেই ঘুড়ি বানাতাম। বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিতাম। সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। তবে এখানে ঘুড়ি উড়িয়ে ভালো লাগছে। তবে এবার উৎসবের আমেজটা কম কম মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।