ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফাগুনের বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
ফাগুনের বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি

লালমনিরহাট: শীতের বিদায় বেলায় ফাগুনের শুরুতে মুসলধারে বৃষ্টিতে ফসলের মাঠে হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারে। বসন্তের শুরুতে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে ফসলের আর্শিবাদ মনে করে বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।

জানা গেছে, তিস্তা ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। কৃষির উন্নতির সঙ্গে জেলার অর্থনীতির মুক্তি ঘটে। কৃষিই জেলার অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি। শীতের শেষে বসন্তের আগমন ঘটেছে প্রকৃতিতে। বসন্তের শুরুতে নানা ফসলে ভরে উঠেছে জেলার ফসলের মাঠ। রোরো ধান আর ভুট্টা তামাকের পাশাপাশি নানা সবজিতে ভরপুর জেলার ফসলি মাঠ।

ফাগুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে রোববার সকালে মুসলধারে বৃষ্টি হয় লালমনিরহাটে। বৃষ্টিতে ভিজে ফসলের ক্ষেত যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ফসলের মাঠে ফুটে উঠেছে কৃষকের হাসি। বৃষ্টির পানির কারণে সেচ যেমন কম লাগছে তেমনি সার কীটনাশকও কম লাগবে। এতে খরচ কমার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা করছেন চাষিরা।

কৃষকরা জানান, শীতের কারণে নষ্ট হতে বসা নানা সবজি ও বোরো ধানক্ষেত অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এমন সময় রোববার সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ক্ষেত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে বোরো ধান, ভুট্টা, আলু, তামাক, বেগুন, মরিচ, পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের ফসল মাঠে রয়েছে। সেচও দিচ্ছেন চাষিরা। ঠিক এমন সময় রোববার সকালে হঠাৎ লালমনিরহাটের আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। আকাশে মেঘ দেখে প্রথম দিকে শীলাবৃষ্টির শঙ্কায় উৎকণ্ঠায় থাকলেও শীলাবৃষ্টি হয়নি। শুধু মুসলধারে বৃষ্টি হয়েছে। যা ফসলের জন্য ছিল আর্শিবাদ।

আদিতমারীর চন্ডিমারী গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, সকালে আকাশের মেঘ দেখে অনেকটা আতঙ্কে ছিলাম শীলাবৃষ্টি হয় কি না? কয়েক বছর আগে শিলাবৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতে যথেষ্ট লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবারের ফাগুনের বৃষ্টিতে ফসলের যথেষ্ট উপকার হয়েছে। সেচ দেওয়া কমে গেছে। সকালের বৃষ্টিতে বিকেলেই ফসলের ক্ষেতের চিত্র পাল্টে গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে বাম্পার ফলন হবে। সবজিসহ বোরো ক্ষেতের জন্য এ বৃষ্টি আর্শিবাদ হয়ে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের শসা চাষ করেছি। যা আগামী সপ্তাহে বাজারে পাঠানো যাবে। পবিত্র রমজানে শসার চাহিদা বিবেচনা করে আগাম শসা চাষ করেছি। এ বৃষ্টির পানি পেয়ে শসার গাছগুলো বেশ সতেজ হয়ে উঠেছে।

তামাক চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, সকালে মেঘ দেখে ভয় পেয়েছিলাম। শিলাবৃষ্টি হলে তামাকের ক্ষেত পুরো নষ্ট হতো। আল্লাহ রহমত শিলা পড়েনি। এ বৃষ্টিতে তামাক পাতার আঠাটা ধুয়ে যাওয়ায় ওজন কিছুটা কম হলেও বৃষ্টির পানিতে তামাকের গাছগুলো বেশ সতেজ হয়ে উঠেছে।

আদিতমারী উত্তর পাড়ার আলু চাষি কাজল মিয়া বলেন, আলুর তেমন ক্ষতি হয়নি এ বৃষ্টিতে। উল্টো উপকার হয়েছে। উঠতি আলু ক্ষেতে যে পরিমাণ সেচ প্রয়োজন ছিল ঠিক ততটুকু বৃষ্টি হয়েছে। এতে উপকার হয়েছে। তবে বৃষ্টি বেশি হলে আলু ক্ষেতে পানি জমে যেত। তখন আলুতে দাগ পড়ত। দাগ পড়া আলুর চাহিদা কম। এ বৃষ্টি সব ফসলের উপকার করেছে।

লালমনিরহাটের পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষেণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত  ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টি কৃষি ফসলের জন্য যথেষ্ট উপকার হয়েছে।  

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাইফুল আরেফিন বলেন, ফাগুনের বৃষ্টি জেলার কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছে। ভুট্টা, বোরো ধান আর সবজির সর্বাধিক উপকার হয়েছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টিতে কোনো ফসলের ক্ষতি হয়নি। বরং উপকার করেছে। বৃষ্টির কারণে সেচ সার খরচ কমবে এবং উৎপাদনও বাড়বে। বৃষ্টির কারণে হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।