ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন-তিক্ততা

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন-তিক্ততা

ঢাকা: প্রায় চার মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে আসছিল। তবে সেই টানাপোড়েন থেকে এখন দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনার জেরে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ দিন বিকেল চারটার কিছু আগে প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর দপ্তরে তাকে তলব করা হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলে আসছিল। তবে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি শুরু হয়।

চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে ভারতের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীরা যেখানে ধরাছোঁয়ার বাইরে সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাল্টা বিবৃতি দিয়ে বলে, ভারতের এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।

এরপর ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের সামনে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামে একটি উগ্রবাদী সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশের ব্যারিকেড ভেঙে মিশনে হামলার চেষ্টা চালায় ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুতুল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরদিন ২৯ নভেম্বর ঢাকা বিবৃতি দিয়ে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে ভারতের সব বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তার আহ্বান জানানো হয়।

এরপর ২ ডিসেম্বর আগরতলার বাংলাদেশ মিশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে উগ্রবাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি। সংগঠনের সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে মিশনে হামলা চালায় এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে যথাযথ তদন্ত দাবি করেছে। এ ছাড়া চলমান ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। সে প্রেক্ষিতে কলকাতার একটি হাসপাতাল ও দুই-একজন চিকিৎসক বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এরফলে উভয় দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে।

সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে যখন দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলে আসছিল, এরমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আহ্বান জানান। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও অসন্তোষ জানিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সংখ্যালঘুদের নিয়ে যেন কোনোভাবেই বিভ্রান্তি না ছড়ায়, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে ২ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে ব্রিফ করেন তিনি। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করছিলেন, ঠিক তখনই আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনা ঘটছিল।

চলতি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) আয়োজন চলছে। এতে যোগ দিতে আসার কথা রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির নেতৃত্বে একটি  প্রতিনিধিদলের। তবে চলমান পরিস্থিতিতে এফওসি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র  উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে প্রকৃতপক্ষেই দুই দেশের সম্পর্কে সমস্যা চলছে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। তবে আমরা স্বাভাবিক, ভালো ও সুসম্পর্ক চাই। এই সম্পর্ক অন্তরের চেয়ে স্বার্থই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সম্পর্ক স্বার্থের মধ্য দিয়েই দেখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২৪
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।