বেইজিং থেকে ফিরে: একটি সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা দেবে চীন। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত বিকাশে চীনা কোম্পানিগুলোর আগ্রহও অনেক বাড়ছে।
ঢাকার চীনা দূতাবাসের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল বেইজিং সফর করে। প্রতিনিধিদলের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো চীনের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে পরিদর্শন। প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ের হুয়াওয়ের এক্সিবিশন সেন্টার পরিদর্শন করে। এ সময় হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিধি দলকে জানান, হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠানকে বেশির ভাগ মানুষই চেনে একটি মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবে। আবার এটাও অনেকে জানে যে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দিতে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সরবরাহ করে এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এগুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে থাকে হুয়াওয়ে। সব মিলিয়ে হুয়াওয়ের রয়েছে মূলত ৫টি বিভাগ- আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার, কনজ্যুমার, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল পাওয়ার, ইন্টেলিজেন্ট অটোমোটিভ সল্যুশন্স।
১৯৮৭ সালে মাত্র ২০ হাজার চীনা ইউয়ান (বর্তমানে বাংলাদেশি তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা) নিয়ে চীনে যাত্রা শুরু করে হুয়াওয়ে। তবে গত বছর শুধু গবেষণা ও উন্নয়নেই বিনিয়োগ করেছে ১৬৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন চীনা ইউয়ান (প্রায় ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন টাকা)। এখানে বর্তমানে কর্মীসংখ্যা দুই লাখের বেশি, যার ৫৫ শতাংশ কাজ করেন গবেষণা ও উন্নয়নে।
বিশ্বজুড়ে ১৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেড় যুগেরও বেশি সময় থেকে সর্বাধুনিক পণ্য ও সেবা দিয়ে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শুধু প্রযুক্তি সরবরাহকারীর ভূমিকায় ছিল না, বরং বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে এক বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। টেলিকম সেবার অবকাঠামো থেকে শুরু করে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের প্রতিটি স্তরেই হুয়াওয়ের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক লক্ষ্য অনুসারে বাংলাদেশের জন্য মূল লক্ষ্য হলো ‘বিল্ডিং এ ফুললি কানেক্টেড ইন্টেলিজেন্ট বাংলাদেশ’ বা ‘একটি সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশ গঠন’।
জানা যায়, প্রথম দিকে বেশ কয়েক বছর হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠান সময় নেয় বাংলাদশের টেলিযোগাযোগ খাতকে পর্যবেক্ষণ করতে। উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়া যায় তা খুঁজে বের করা। ২০০৩-০৪ সালের দিকে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে মোবাইল ফোনের কলরেট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করে। টেলিকম অপারেটরদের সাশ্রয়ী প্রযুক্তিগত সুবিধা সরবরাহের মাধ্যমে এই উদ্যোগটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব করে তুলেছে এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে আসছে হুয়াওয়ে। তিনটি কার্যালয় ও একটি একাডেমির মাধ্যমে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৫০০ কর্মী কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টও করে থাকে। ফলে একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েট বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কাজ শেখার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এসব তরুণ বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
টিআর/জেএইচ