ঢাকা: ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে দেশের চারিদিকে যে চাকচিক্য তা অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের কারণে হয়েছে। তাদের প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে রাজধানীর এফডিসিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ উদযাপনের অংশ হিসেবে এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের প্রখর দেশাত্ববোধ রয়েছে। তারা বিগত ছাত্র- জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ও রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। নানা শর্তের বেড়াজালে আইএমএফ চার বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। অথচ প্রবাসীরা কোনো শর্ত ছাড়াই বছরে ২৪-২৫ বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করছে। তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে তাদের মূল্যায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর বর্তমানে প্রদত্ত প্রণোদনার হার বাড়ানোর সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে অভিবাসীদের সন্তানদের স্কুল কলেজে ভর্তির বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না করা গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বেড়ে যেত। এদেশের উন্নয়নের মূল নায়ক কৃষক, শ্রমিক, মজুর, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সারা পৃথিবীতে অবস্থানকারী অভিবাসী ভাই-বোনেরা। অভিবাসী কর্মীরা আমাদের সোনার সন্তান।
তিনি আরও বলেন, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের শ্রমে ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। তাদের উপার্জিত আয়ের কারণেই আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে, আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। আমরা দেখেছি পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে জুলাই বিপ্লবের সময় সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে ১.৯১ বিলিয়ন ডলার অথচ আওয়ামী সরকার পতনের পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এ দুই মাসে প্রবাসী আয় ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। মূলত জুলাই মাসে হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেয়। পতিত আওয়ামী সরকার যদি আরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতো, আমার ধারণা প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাদের রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধই করে দিত।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সঙ্গে যেসব মালিকরা জড়িত ছিলো, সেসব ব্যাংকগুলোর ফরেন রেমিট্যান্স হাউজ কর্মীদের কাছ থেকে সংগৃহীত রেমিট্যান্স দেশেই পাঠাতো না। ওই বিদেশি অর্থ ব্যাংক মালিকরা তাদের রেমিট্যান্স হাউজ থেকে নিজেরাই সেই দেশে রেখে দিতো। বাংলাদেশে তা পাঠাতো না। সে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তিত হওয়ায় এখন আর প্রবাসী কর্মীদের থেকে সংগ্রহকৃত অর্থ তারা সেই দেশে রেখে দিতে পারছে না। এটিও রেমিট্যান্স বাড়ার আর একটি কারণ। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রি, আমলা, ব্যবসায়ীরা লুণ্ঠনকৃত অর্থ বিদেশে পাচার করতো। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়ার আর একটি প্রধান কারণ। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, সিভিল অ্যাভিয়েশন, ইমিগ্রেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালেই চলবে না।
‘অভিবাসী কর্মীদের যথার্থ মূল্যায়নই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে পরাজিত করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, ড. জামিল আহমেদ, সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী ও সাংবাদিক আরাফাত আরা।
প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, সনদপত্র ও চ্যাম্পিয়ন দলকে ৩০ হাজার ও রানার আপ দলকে ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
এমএমআই/জেএইচ