বরিশাল: একটি ভাঙ্গা ব্রিজের কারণে দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। দীর্ঘ বছর ধরে ব্রিজটির জরাজীর্ণ অবস্থা থাকলেও সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই প্রকৌশল দপ্তরের।
জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রাম ও বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ধুমচর এলাকার সঙ্গে সড়কপথের সংযোগ ঘটিয়েছে ব্রিজটি। স্থানীয়ভাবে যেটি ধুমচর ব্রিজ হিসেবেই পরিচিত। তবে দীর্ঘ বছর সংস্কারের অভাবে এখন ব্রিজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, প্রায়ই ব্রিজটি থেকে যানবাহন নিচে পড়ে যাওয়াসহ নানানভাবে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে এমন অবস্থা, যানবাহন তো দূরের কথা; ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটেও ব্রিজটি পার হতে চায় না। ফলে শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারো মানুষ একটা ব্রিজের অভাবে এখন ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে।
চাঁদপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন বাংলানিউজকে জানান, এ ব্রিজটি হয়ে বাবুগঞ্জ সদর, মীরগঞ্জের মানুষ উলাল বাটনা হয়ে বরিশাল সদরে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করে আসছে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজটি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে ব্রিজটি এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে ব্রিজটির দুই পাশসহ মাঝের পাটাতনও দেবে গেছে, রেলিংগুলো পড়ে গেছে, মাঝখানে পলেস্তার খসে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজটিতে কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিলেও সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।
তিনি বলেন, আমি ৭-৮ বছর ধরে দেশে আছি, আর এতদিন ধরেই ব্রিজটির বেহাল দশা দেখছি। সরকারিভাবে সংস্কার না করায় এটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী, প্রয়োজন নতুন ব্রিজের। তবে তাও কবে হবে কেউ জানে না।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ব্রিজের এই বেহাল দশা দেখে স্থানীয় এক ইটভাটা মালিক বছর খানেক আগে সংস্কার করেছিলেন। নিচে খুঁটি দেওয়া আর গর্তের ওপর কাঠের পাটাতনের মতো করা হয়েছিল। কিন্তু ‘সর্বাঙ্গে ক্ষত’ ব্রিজটি তাতেও রক্ষা করা যায়নি। এখন এটি দিয়ে না পারলে সাধারণ মানুষও চলাচল করে না। ধুমচর থেকে বরিশাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে গেলে সড়কপথে মোটরসাইকেলে প্রায় ৪০ মিনিট ঘুরে আসতে হয়। আর শিক্ষার্থীরা পাশের অন্য একটি ব্রিজ হয়ে ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত করে।
এছাড়া আমার মতো আশপাশের কৃষকরাও কম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন না ব্রিজটির কারণে। ব্রিজটিতে ভারী যানবাহন উঠতে না পারায় এখন সবাইকে ঘুরে আসতে হয়, ফলে যানবাহনের ভাড়া বেশি দিতে হয়। আর এর প্রভাব পড়ছে কৃষকের ওপর। যেমন হাজার টাকার মালামাল এখন শত টাকা কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বরিশাল সদর থেকে বীজ, সারসহ যে কোনো মালামাল আনতে আমাদেরও বেশি ভাড়া গুনতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ব্রিজটির কারণে বছরের পর বছর ধরে বিপাকে আছি। শুধু সাধারণ মানুষ নয়; আশপাশের স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের অভিভাবকরা থাকেন সন্তানদের নিয়ে উৎকণ্ঠায়। কারণ যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় যে কেউ হতাহত হতে পারেন।
স্থানীয় অপর এক বাসিন্দা মো. শাহিন হোসেন বলেন, দুই যুগের অধিক সময় পূর্বে ব্রিজটি নির্মাণ হয়েছিল। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরেই এর বেহাল অবস্থা। বর্তমানে রেলিং না থাকায় এবং ব্রিজটির মাঝে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝখানে দেবে গিয়ে বিশাল ফাঁকা হয়ে গেছে। সেখানে কাঠের পাটাতন দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করে। আর এভাবে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন ব্রিজ থেকে খালে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
তিনি বলেন, ভারী গাড়ি তো চলাচল করেই না, সাধারণ মানুষও ব্রিজটি হেঁটে পার হতে ভয় পায়। তবে বেশি বিপদ হয় যখন গুরুতর অসুস্থ কিংবা গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বরিশাল যেতে হয়। ব্রিজটি দিয়ে বরিশালের মূল শহরের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার হলেও এখন রোগীদের নিয়ে যেতে হয়ে দীর্ঘপথ ঘুরে। এতে অনেকসময় মুমুর্ষু রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা চাই, ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পথ সচল রাখা হোক।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলী কাজী এমামুল হক আলিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে ব্রিজটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছেন। গত বছর ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের কথা শুনলেও এ অবধি বাস্তবে তার কোনো আলামতই দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
এমএস/এইচএ/