ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আগামী ২০ জানুয়ারি বেইজিং সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যেতেন। প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রথম সফর হিসেবে ভারতকেই বেছে নিতেন তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনেই যাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এবারের চীন সফর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নানা কারণে চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন
বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন । সে অনুযায়ী চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে উভয়পক্ষই নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি নিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন অনেক আগে থেকেই মধ্যস্থতা করে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে চীন দূতিয়ালি করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্যের ভারসাম্য
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য।
চীনা বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এরপরও চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে না। সে কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা উঠবে।
চীনা ঋণের সুদ হার
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। বিভিন্ন প্রকল্পে সুদহার বিভিন্ন রকম। এই হার কমাতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীন সফরে আলোচনায় সুদহার কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে- যেমন আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।
নদী ব্যবস্থাপনা সমঝোতা সই
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারক রয়েছে। সেই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এই সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।
আগামী ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীন সফর করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আইয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন । একইসঙ্গে বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
টিআর/আরএইচ