নড়াইল: নড়াইল সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনুমতি বা ছাড়পত্র কিংবা নিয়মনীতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব গাছ কেটে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে চারটি সরকারি গাছ প্রকাশ্যে কেটে দুই লাখ টাকা বিক্রির অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর দুইজনকে অভিযুক্ত করে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভদ্রবিলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বেবি রানী রায়। এরপরও অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটা ও পাচার থেমে নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- নড়াইল সদর উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের মৃত শফিউদ্দিন মোল্যার ছেলে গোলাম রব মোল্যা ও ভদ্রবিলা গ্রামের মোহর শেখের ছেলের লিটন শেখ।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের পাশে সরকেলডাঙ্গা মৌজার খাস খতিয়ানের ১০৬৮ ও ১০৭১ নম্বর দাগের জায়গার ওপর তিনটি বড় মেহগনি ও একটি বড় দেবদারু গাছ ছিল। দিঘলিয়া গ্রামের গোলাম রব মোল্যা গত ২৯ ডিসেম্বর গাছকে নিজের মালিকানা দাবি করে গাছগুলো কাটতে থাকেন। এসময় ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাসুম বিল্লাহ সরকারি গাছ কাটতে নিষেধ করেন। নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি গাছগুলো কেটে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
এসময় ভদ্রবিলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বেবি রানী রায় বাংলানিউজকে বলেন, গাছগুলো সরকারি জমিতে ছিল। গোলাম রব ও লিটন শেখ যোগসাজশে গাছগুলো চুরি করে কেটে বিক্রি করেছেন। আর এ অভিযোগে ওই দুই ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম রব মোল্যা বাংলানিউজকে জানান, গাছগুলো তার নিজের জায়গায় ওপর। তিনি গাছগুলি ভদ্রবিলার লিটন শেখের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে আরেক অভিযুক্ত লিটন শেখ গাছ কাটা ও ক্রয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, তাকে অহেতুক ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সিঙ্গাশোলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পাকা রাস্তার পাশ থেকে ছয়টি মেহগনি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিল্লাল শেখের বিরুদ্ধে। একইভাবে শেখহাটি ইউনিয়নের আফরা গ্রাম থেকে মালিয়াট অভিমুখে পাকা রাস্তার পাশ থেকে সাতটি মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করেছেন স্থানীয় একটি চক্র। পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতায় চারটি গাছ উদ্ধার হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এছাড়া বিছালী ইউনিয়নের চাকই মোল্লার হাটে ১২ টি সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে জনৈক হিমু শেখের বিরুদ্ধে। গাছগুলো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিমু শেখ বাংলানিউজকে বলেন, গাছ বিক্রির টাকা স্থানীয় মসজিদে দেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের চাকই পূর্ব পাড়া আয়ুব খানের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি চারটি গাছ বিক্রি করার অভিযোগ। তবে সরকারি গাছ বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
প্রকাশ্যে এসব সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) দেবাশীষ অধিকারী বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে একটি ঘটনায় সরকারি গাছ লুট করার অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তদন্ত মোতাবেক অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
আরএ