ঢাকা: অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অভিন্ন গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও সংস্কার এবং শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যান্য দাবির মধ্যে মধ্যে ছিল, ছয় মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতি ও প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপ্রধান ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান আশরাফ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত শ্রম সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশও প্রকট আয় বৈষম্যর শ্রমিকদের দুর্দশা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। শ্রমিকের গুরুত্বপূর্ণ দাবি মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার এবং শ্রমিকের অধিকার ও মঙ্গল নিশ্চিতে কমিশন সুপারিশ তৈরির কাজ করে যাচ্ছে।
শ্রম সংস্কার প্রস্তাবনা যেন বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়েও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শ্রমিকের শ্রমের মূল্য ও মর্যাদা নিশ্চিতে সকলকে এক হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান সুলতান উদ্দীন আহমেদ।
তাসলিমা আখতার বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীর জান-জীবিকা-জবানের অধিকার নিশ্চিতে আইন পরিবর্তন ও শ্রম সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, সামনে শ্রম আইনের নতুন অধ্যাদেশ তৈরির কাজ হচ্ছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শ্রমিকের ইউনিয়ন চর্চার বাধা দূর করার তাগিদও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এখনও ইপিজেড এবং ইপিজেডের বাইরে ভিন্ন আইন হয়ে শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বিত হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে।
এক দেশে দুই আইনের বদলে এক অভিন্ন গণতান্ত্রিক শ্রম আইন দাবি করেন বক্তারা। শ্রমিক স্বার্থে শ্রম আইন অধ্যাদেশ করার আহ্বান জানান তারা।
নেতারা বলেন, নারী শ্রমিকের ঝরে পড়া রোধে প্রসূতিকালীন সুবিধা নিশ্চিতে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবি শ্রমিকরা দীর্ঘদিন করে এলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারি পর্যায়ে নারীদের ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই।
তারা বলেন, নারী শ্রমিকেরা পেশাগত কাজের সঙ্গে প্রজাতি রক্ষা এবং ভবিষ্যতের শ্রমিকদের জন্মদানের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। সেজন্য তার ছয় মাস সবেতন ছুটি জরুরি।
একইসঙ্গে নেতৃত্ব আইএলও কনভেনশন ১৯০ এর অনুস্বাক্ষরের জন্য আইনে যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতি, অভিযোগ সেল ও শাস্তির বিধান রাখার আহ্বান জানান।
তারা আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শ্রমিকের ন্যায্য ও সাংবিধানিক অধিকার। অথচ আইনে ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনে শতকরা ২০ শতাংশ, এক প্রতিষ্ঠানে তিনটি মাত্র ইউনিয়নের বেশি করতে না পারা ইত্যাদি আইনের বেড়াজালে শ্রমিকের রেজিস্টার্ড ইউনিয়ন করার অধিকার খর্বিত করছে।
নেতারা আসন্ন আইনের নতুন অধ্যাদেশে শ্রমিকদের প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন এবং রেজিসে্ট্রশন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবান জানান।
একইসঙ্গে মজুরি আন্দোলনের শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানান। একইসঙ্গে বেক্সিমকোসহ লে অফ করা বিভিন্ন কারখানা খুলে দেওয়া, নয়তো শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের জন্য দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
আরএইচ