ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মুখে হাসি, পাবেন যেসব সুবিধা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫
‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মুখে হাসি, পাবেন যেসব সুবিধা

ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের গত ১৬ বছরে জনপ্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা তাদের বকেয়া পাওনার পাশাপাশি পেনশনের আর্থিক সুবিধাও পাবেন।

 
 
রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৯ জন। গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপ-সচিব পদে চারজনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন।

পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হাসিমুখে দেখা যায় অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তারা জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগে আসেন। তারা বলছিলেন, দীর্ঘ সময় রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে তাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়।

অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, চাকরির বয়স থাকলে তিনি এতদিনে সচিব হয়ে যেতেন। কিন্তু বঞ্চনার কারণে তিনি তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

যেসব সুবিধা পাচ্ছেন পদোন্নতিপ্রাপ্তরা

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি পাওয়া সচিব, অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১, যুগ্ম সচিব এবং উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তারা বর্তমান অর্থবছরে তাদের বকেয়া পাওনাদির ৫০ শতাংশ পাবেন। বাকি ৫০ শতাংশ পরবর্তী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) পাবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বয়স ৫৭/৫৯ বছর পূর্তি পর্যন্ত সর্বশেষ পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে বহাল ছিলেন বলে গণ্য হবেন।
তারা অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি শেষে অবসরের জন্য নির্ধারিত তারিখে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন মর্মে গণ্য হবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিধি অনুযায়ী এবং তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতাদি পেনশন ইত্যাদি সমন্বয় করে আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।

এই সাবেক কর্মকর্তাদের জন্য জারি করা পিআরএল  আদেশ বাতিল করা হয়েছে। বেতন নির্ধারণের সময় তাদের অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি সমন্বয় করতে হবে।

আর অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১, যুগ্ম সচিব এবং উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তারা এক বা একাধিক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির তারিখ থেকে বিধি মোতাবেক প্রাপ্যতা অনুযায়ী সব আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।

সরকার বদলে ভাগ্যেরও বদল

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তারা তাদের পাওনা মেটানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দেয়। পরে তাদের কাছে আবেদন আহ্বান করে।

২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে বঞ্চনা নিরসন কমিটি গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন দেয়।

রয়েছে অসন্তোষও

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ভূতাপেক্ষভাবে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৯ জন। তাদের মধ্যে ৪৫ জনই ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা।

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন নিজে পদোন্নতি না পেলেও এক ব্যাচ থেকে এত বেশি সংখ্যক কর্মকর্তার সচিব পদে পদোন্নতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, জনপ্রশাসন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বর্তমান সরকারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সবাই ১৯৮২ ব্যাচের।

‘এই ১১৯ জন সচিব পদোন্নতির মধ্যে ৪৫ জন ১৯৮২ ব্যাচের (বিশেষ ব্যাচসহ)। আমিও অতিরিক্ত সচিব ছিলাম এবং বিগত সরকার দুর্নীতি দূর করতে চেয়ে অন্যায়ভাবে চারটি শাস্তি দিয়েছিল। প্রায় দেড় বছর ওএসডি অবস্থায় রেখে চাকরি থেকে বিদায় দিয়েছিল। ’

প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, অতিরিক্ত সচিব যারা পদোন্নতি পেলেন, তারা কীভাবে কোন ক্রাইটেরিয়ায় বঞ্চিত ছিলেন? কীভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত ছিলেন?

তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১১৫ জনের মধ্যে ৪৫ জনই কীভাবে ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা হলেন? এই অতিরিক্ত সচিব, যারা সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন, তাদের বঞ্চিত হওয়ার কাহিনী জানতে চেয়েছেন তিনি।

তা না হলে মাহবুব কবীর মিলনের দাবি, সব অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে ভূতাপেক্ষ সচিব পদোন্নতি দিতে হবে। তিনি লেখেন, আমি মামলা করব হাইকোর্টে, সেখানে অবশ্যই জানতে চাইব এই অতিরিক্ত সচিবদের বঞ্চনার কাহিনী, কীভাবে ১৯৮২ ব্যাচের ৪৫ কর্মকর্তা বঞ্চনার শিকার হলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫
এমআইএইচ/আরএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
infostation welcome Banner
img img img
img
img img
img img
img img img img img img
img