সিরাজগঞ্জ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জনগণের শাসন এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় নাই। যারা দায়িত্বে আছেন তারা জোর করে সেখানে বসেন নাই।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সিরাজগঞ্জ শহরের ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী এ দেশে বারবার গণতন্ত্র হরণ হয়েছে। বারবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি, শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়া। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এই কয়দিনে হয় নাই। আপনারা এই সিরাজগঞ্জের জনগণসহ বাংলাদেশের জনগণ কি অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কি প্রচণ্ড চাপের মুখে আপনাদের জীবনধারণ করতে হয়েছে। কত গুম-খুন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের পরিবর্তন হলো। আমাদের দাবি ছিল স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদের পতন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় নাই।
যারা বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না তারা মিথ্যা বলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ঘোষণা একটি সংস্কার প্রস্তাব। তারেক রহমান ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন-সেটাও সংস্কার প্রস্তাব। দাবিনামা না, এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি। উচ্চকক্ষের দাবি আমরা বহু আগেই করেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার কথা অনেক আগেই বলেছি।
তিনি আরও বলেন, যদি আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারি, যদি না জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারি, তাহলেই পতিত ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে। যদি আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, যদি তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারি, তাহলেই পতিত স্বৈরাচারের আর কোথাও জায়গা হবে না।
আমরা চাই যারা এত বছর ধরে মানুষকে খুন করেছে, অত্যাচার করেছে তাদের দ্রুত বিচার করতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বারবার জীবন দিয়েছে পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু পরিবর্তন হয় নাই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। যে গণতন্ত্রের জন্য যে সাম্যের জন্য যে মানবিক মর্যাদার জন্য জীবন দিয়েছিলেন আমরা সেটা দিতে পারি নাই। ৭ নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন কোথাও শৃঙ্খলা ছিল না, সেনানিবাসে পর্যন্ত অফিসারদের খুন করা হচ্ছিল, সবার কাছে বেআইনি অস্ত্র ছিল। সেই অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের হাল ধরলেন।
১৯৭১ সালে যেমন বলেছিলেন, আমি মেজর জিয়া বলছি-মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল। একইভাবে ৭৫-এ বললেন আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি, মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে, দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। আবার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেয়েছি। শিল্প কারখানা চালু হয়েছিল, মাঠে ফসল উৎপাদন হচ্ছিল। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে তাকে খুন করা হলো। আবার ৯ বছর অবিরাম লড়াই করে বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, আজিজুর রহমান দুলাল, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, ভিপি অমর কৃষ্ণ দাস, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেত্রী কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপাসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
আরএ