ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেলায় মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালিয়ে দৃষ্টি কাড়ছেন নওশাদরা!

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
মেলায় মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালিয়ে দৃষ্টি কাড়ছেন নওশাদরা!

বগুড়া: বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা মানেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। এ মেলায় মাছ, মিষ্টি ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খাবারের পাশাপাশি মেলায় দৃষ্টি কাড়ছে মন মাতানো হোন্ডা এবং কার খেলা।

খেলাকে ঘিরে চারদিক কাঠ দিয়ে ঘিরে মাটির ওপর বানানো হয়েছে কূপ। নাম দেওয়া হয়েছে দ্য মিম মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার খেলা।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর এলাকার মো. নওশাদ (৫৩), বগুড়া শেরপুর উপজেলার আলমগীর হোসেন (৩৫), জয়পুরহাট জেলার নুরুল ইসলাম (৩৪) এ খেলায় অংশগ্রহণ করে তাদের দলটি দর্শকদের মন মাতাচ্ছেন। ১০ মিনিটের এ খেলা দেখতে ৩০ টাকায় টিকিট কাটতে হয় দর্শনার্থীদের।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার মাঠে কৃত্রিমভাবে তৈরি কূপের মাঝখানে তিনটি রঙ চটা পুরোনো মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকারের খেলা চোখে পড়ে।  

দেখা গেছে, কূপটি তৈরিতে লোহার অ্যাঙ্গেল, খুঁটি, বাঁশ, নাট-বল্টুসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুর ব্যবহার রয়েছে। বড় সড় জায়গা নিয়ে বানানো এ মৃত্যুকূপে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে খেলা দেখানো হয়। খেলাটি যখন চলে তখন দর্শককে উল্লাস করতে দেখা যায়। চালক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পুরো ১০ মিনিট কূপে গাড়ির ঘূর্ণি ছোটান।

দর্শকরা খেলা দেখতে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে কূপের ওপরে চারপাশে কাঠের তৈরি মাচায় দাঁড়িয়ে যান। সময় হওয়া মাত্র চালক আলমগীর হোসেন প্রথমে মোটরসাইকেলে ওঠে পড়েন। মাইকে ঘোষণা দেওয়া মাত্র মোটরসাইকেল চালু করে সেই কাঠের কূপের চারপাশে ঘুরতে থাকেন। খেলোয়াররা কখনো কখনো এক হাত ছেড়ে কখনো বা দু’হাত ছেড়ে নানা কসরত দেখাতে থাকেন। ফটফট আওয়াজ তুলে মোটরসাইকেল ঘূর্ণি খেতে থাকে দ্রুতগতিতে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটতে শুরু করেন নুর ইসলাম। মোটরসাইকেল চালানোর পর শুরু হয় প্রাইভেটকারের ঘূর্ণি।

প্রায় ১২ বছর বয়স থেকে এ খেলায় জড়িত নওশাদ প্রাইভেটকার নিয়ে একইভাবে কূপের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ান। বেপরোয়া গাড়ি চালানোটাই দর্শকদের আনন্দ খোরাক। প্রায় ৪০ বছর ধরে জীবনবাজি রাখা এ খেলা তিনি খেলে আসছেন বিভিন্ন মেলায়। তাদের মোট ১০-১২ জনের একটি দল। এ খেলাকে ঘিরেই তাদের সংসার চলে। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জীবিকার একমাত্র পেশা হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন তারা।

প্রাইভেটকার চালক নওশাদ বাংলানিউজকে জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি এ খেলার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। খেলাটি আয়ত্তে আনার জন্য তাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। জীবনকে অনেকটা হাতের মুঠোয় নিয়ে এ খেলা খেলতে হয়। পুরো বিষয়টি দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার ওপর নির্ভর করে।

মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন ও নুর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তারা দুজনেই খুব কম বয়সে এ খেলায় জড়িত হন। খেলাটি আয়ত্তে আনতে প্রথমে তারা মাটিতে গর্ত করে খেলা শিখতে ও দক্ষতা আনতে অধ্যবসায় চালাতেন। ধীরে ধীরে খেলাটি তাদের আয়ত্তে চলে আসে। এ খেলাকে ঘিরে তাদের জীবিকা। জীবিকার তাগিদে তাদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দলের সঙ্গে ছুটতে হয়। খেলায় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দর্শনার্থীদের মন মাতাতে তারা পছন্দ করেন।

এদিকে পোড়াদহ মেলার প্রথম দিন সবাই মাছ-মিষ্টি কেনাসহ নানান কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কেউ কেউ বিনোদন নিতে ছুটে আসছেন খেলা দেখতে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
কেইউএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।