ঢাকা, বুধবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাতজনের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করেন আনোয়ার: র‌্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
সাতজনের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করেন আনোয়ার: র‌্যাব

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত সন্ত্রাসী ‘কব্জিকাটা গ্রুপে’র প্রধান মো. আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ারকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পাশাপাশি তার দুই সহযোগী মো. ইমন (২০) ও মো. ফরিদকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পৃথক অভিযানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আনোয়ার এবং আদাবর থেকে তার দুই সহযোগী ইমন ও ফরিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি সামুরাই, দুটি ছুরি, আট কেজি গাঁজা, একটি প্রাইভেটকার ও একটি হাত ঘড়ি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ভয়ের রাজত্ব গড়ে তুলতে আনোয়ার অসংখ্য মানুষকে কুপিয়ে আহত ও পঙ্গু করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর মধ্যে সাতজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন করেছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার।

তিনি জানান, জীবিকার সন্ধানে ২০০৫ সালে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় বাবার কাছে আসেন আনোয়ার। প্রথমে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহনের কাজ করলেও এক পর্যায়ে ছিনতাই ও বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পরে ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জিকাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে আনোয়ার। টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কব্জি কাটার সেই ভিডিও আলোড়ন সৃষ্টি করলে তার কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলে কব্জিকাটা গ্রুপ নামে এক দুর্ধর্ষ বাহিনী। তার এ বাহিনী অত্যন্ত সুকৌশলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। এলাকায় তার এ বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।

 কব্জিকাটা গ্রুপের অপরাধের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কব্জিকাটা আনোয়ারের বাহিনী যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে। গ্রুপ সদস্যরা রাস্তায় যানজট তৈরি করে, সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর ও নজর রাখে। রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ জনগণ বাধা দিচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখে। এরপর তারা ফিল্ম স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।  

ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার আরও বলেন, গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ারের হাতেই ৭-৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত, আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেন না অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখান আনোয়ারের কব্জিকাটা গ্রুপের সদস্যরা।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার এখন পর্যন্ত তিনজনের কব্জি কাটার কথা শিকার করলেও আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, তিনি সাতজনের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করেছেন। আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রথম আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে আদাবর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মোহাম্মদপুরে আগে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ হতো। কিন্তু পরিবর্তিত সময়ে এসে কারা অপরাধীদের মদদ দিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এ পরিবর্তনের জের ধরে সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে ওঠে। আমরা যৌথভাবে অভিযান করে জেনেভা ক্যাম্পসহ মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। মোহাম্মদপুর ও আদাবর কেন্দ্রিক কোনো সন্ত্রাসী ও গডফাদারের স্থান হবে না।

আনোয়ারের মদদ দাতাদের বিষয় জানতে চাইলে র‍্যাব-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আনোয়ারের পেছনে দীর্ঘদিন লেগে ছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য আছে মোহাম্মদপুরের এক্সেল বাবু নামে এক ব্যক্তি তাকে মদদ দিচ্ছেন। তিনি আড়ালে থেকে আনোয়ারকে শেল্টার দেন। আমরা কাজ করছি। তথ্য প্রমাণ পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।