ঢাকা: আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন মহাদেশটির সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত এবং গভীর সহযোগিতার নতুন পথ অন্বেষণ করতে আগ্রহী।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস ) অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘লুক আফ্রিকা: এক্সপ্লোরিং নিউ হরাইজন্স ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে এই সেমিনারের আয়োজন করে বিস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আফ্রিকা অঞ্চলকে আমাদের জানতে হবে, তাদের যেমন সুযোগ দিতে হবে, একই সঙ্গে আমাদের সুযোগ নিতে হবে। আফ্রিকায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশই বিনিয়োগ বলতে মাইনিংয়ে (খনি) বিনিয়োগ বুঝে থাকে, তবে আমাদের এ খাতে বিনিয়োগ নেই। সেখানে কৃষিখাত, সফটওয়ার, ওষুধসহ নানা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। আমাদের সেসব সুযোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এক সময়ে আফ্রো-এশিয়া সংহতি ছিলো, এটা পুনরায় উজ্জীবিত হতে পারে। কেননা আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্কে এখন অগ্রগতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের সুযোগ রয়েছে। সব দেশেই সুযোগ নিতে পারে। আমাদেরও সুযোগ অন্বেষণ করতে হবে।
বইটির উপর একটি বক্তব্য প্রদান করেন বিসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. রাজিয়া সুলতানা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা উইংয়ের প্রাক্তন ডিজি এবং বর্তমান উত্তর আমেরিকার উইংয়ের মহাপরিচালক এএফএম জাহিদ-উল-ইসলাম ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) অধ্যাপক ও গবেষণা পরিচালক ড. মুন্সী সুলাইমান এবং স্কুল অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রধান ড. মারুফা আক্তার।
বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আফ্রিকা তার অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রচুর্যতায় উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুযোগের একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নত শাসনব্যবস্থার দ্বারা উদ্দীপিত অনেক আফ্রিকান দেশ চিত্তাকর্ষক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের নজর এড়ায়নি, যা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্য প্রযুক্তির মতোও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। বিনিময়ে আফ্রিকান দেশগুলো পারস্পরিক সুবিধার লক্ষ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চুক্তি কৃষি, ই-কমার্স, শিক্ষা, পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরবরাহের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ এবং আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে স্বার্থের এই সমন্বয় দক্ষতা এবং সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উভয়ই বৃদ্ধির জন্য অসংখ্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, আফ্রিকা অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও গভীর সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে নামিবিয়ায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর মাধ্যমে আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুরু হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় অবদান রেখে আসছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য ও কর্মী পাঠিয়েছে।
উপনিবেশবাদের বিচ্ছিন্নতার সময়কালে উভয় অঞ্চলই সাধারণ সংগ্রাম ভাগ করে নিয়েছে এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করেছে। যদিও বাংলাদেশ এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তবুও আফ্রিকার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততার পূর্ণ সম্ভাবনা মূলত অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কূটনৈতিক মিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মিডিয়া প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি, ২৪,২০২৫
টিআর/এমএম