ঢাকা: রাজধানীর শাহজাদপুরে একটি আবাসিক হোটেলের ভবনে আগুনে লাগার পর অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় মালিকপক্ষের গাফেলতির কারণে এই চারটা মানুষের প্রাণ গেছে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উচিত।
সোমবার (৩ মার্চ) রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের পরে সিঁড়ি থেকে তিনজন ও বাথরুম থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এতে বোঝা যাচ্ছে আগুন লাগার পরপরই তারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। একপর্যায়ে তারা ছাদে উঠার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে ছাদের গেট তালাবদ্ধ। সেখানে ছিল না কোনো ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা। মানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাদের নিয়ে ব্যবসা না করাই শ্রেয়।
এদিকে আগুন নির্বাপণের পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ফায়ার সার্ভিস ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসে দেখলাম আগুন লাগা ভবনটি ছয়তলা। নিচতলা হার্ডওয়্যারের দোকান, দ্বিতীয়তলায় বিউটি পার্লারের দোকান, তৃতীয় তলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন। দুইতলায় প্রচণ্ড আগুন এবং ধোঁয়া ছিল।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোট চারটি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট কাজ করে। প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হতে না পেরে ওপরে ধোঁয়া উঠে যায়।
ভবনটির চিলেকোঠায় তিনজনের মরদেহ পায় এবং একজনকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয় জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ছাদে যাওয়ার জন্য চিলেকোঠার দরজা বন্ধ ছিল। অর্থাৎ প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে আবাসিক হোটেলের ভেতরে যারা ছিল তারা বাঁচার জন্য ওপরের দিকে উঠে যায়। ওপরে উঠতে গিয়ে তারা দেখতে পায় ছাদের দরজা বন্ধ আছে। এরপর তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারেননি। এজন্য ধোঁয়ার কারণে চারজনের মৃত্যু হয়। চারজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চারজনের মরদেহ ছাড়া দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুনের কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। মালিক কর্তৃপক্ষের কাউকে আমরা পায়নি। কমিটি গঠনের পর তদন্ত করে আগুনের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা হবে।
ভবনটি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়েছে কি না এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী বিল্ডিংটি তৈরি করা হয়নি। ভবনটিতে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। সিঁড়িগুলো ছিল সরু। সিঁড়ির পাশে যে জানালা ছিল সেগুলো কাচ দিয়ে বন্ধ করা ছিল। কাঁচ দিয়ে বন্ধ না থাকলে ধোঁয়া বের হয়ে আসতে পারতো।
এর আগে সোমবার দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটের দিকে শাহজাদপুরের সৌদিয়া নামের একটি আবাসিক হোটেলের ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে আগুন সম্পন্ন নির্বাপণ করে।
এদিকে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ হোসেন জানান। চারটি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চলছে। দুইটি মরদেহ শরীরে হালকা দগ্ধ আছে। এদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তার নাম মিরন জমাদ্দার (৫৫)। মিরনের বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুলহুদা বটতলা গ্রামে। আগামী মঙ্গলবার (৪ মার্চ) তার ছেলে মনিম জমাদ্দারের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। এর জন্য মিরন গুলশান শাহজাদপুর হোটেল সৌদিয়া একটি রুম ভাড়া নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪,২০২৫
এজেডএস/এএটি