ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

সংস্কার হচ্ছে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ, দুর্যোগে রক্ষা পাবে ফসল

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
সংস্কার হচ্ছে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ, দুর্যোগে রক্ষা পাবে ফসল সংস্কার হচ্ছে বেড়িবাঁধ

লক্ষ্মীপুর: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত ডুবত ফসলি জমি। লবণ পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো ক্ষেতের ফসল।

প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতো কৃষকরা।  

কৃষকদের ফসল জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় 'ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট' এর আওতায় সংস্কারকাজ চলছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট থেকে উত্তর দিকে মোল্লারহাট সড়কের চররুহিতা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধের ১০ কিলোমিটার অংশ।  

এতে দুর্যোগ এবং মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পাবে বাঁধের পূর্ব অংশে থাকা হাজার হাজার একর ফসলি জমি, সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার লোকজন।  

স্থানীয় লোকজন জানায়, মজুচৌধুরীর হাটের প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তর অংশে থাকা বেড়িবাঁধটি প্রায় ১০ বছর আগে মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তখন হাজার হাজার একর জমিতে থাকা আমন ধান ও রবি শস্য বিনষ্ট হয়। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হতো। বন্ধ হয়ে যেত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে মজুচৌধুরীর হাটে 'ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট' হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পে ১০.০৪৮ কিলোমিটার জরাজীর্ণ বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি বাঁধের ভাঙা অংশে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। সেইসঙ্গে বাঁধ সংলগ্ন দুই কিলোমিটার অংশে কাম্পের খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। বাঁধ সংস্কার এবং খাল খননে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর স্লুইস গেট নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় দুই কোটি টাকা। বাঁধটির উপরিভাগের প্রস্থ ছয় মিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাঁধের উচ্চতা হবে সাড়ে সাত মিটার। চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।  

স্থানীয় কৃষক মো. সোহেল ইসলাম বলেন, বাঁধের পূর্ব পাশে আমাদের কৃষিজমি আছে। গেল বছর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে আমার ক্ষেতের পাকা সয়াবিন পচে গেছে। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। জোয়ারের পানিতে আমাদের এলাকার বহু কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার বাঁধের সংস্কার কাজ চলছে। জোয়ারের পানি আর আমাদের ফসলের ক্ষতি করতে পারবে না।  

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মুসলিম বলেন, বাঁধটি নির্মাণ হলে এই এলাকার কৃষিকাজে ব্যাপক উন্নতি হবে। বর্ষা মৌসুমে মেঘনার জোয়ারের পানি বাঁধের পূর্ব অংশে ঢুকতে পারবে না৷ আবার শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে ক্যাম্পের খালে পানি ঢুকবে। ওই পানি বোরো চাষাবাদে ব্যবহার করা যাবে।  

স্থানীয় আবুল বাশার বলেন, বাঁধের ওপর দিয়ে লোকজন যাতায়াত করতো। যানবাহনও চলাচল করতো। সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট থেকে রায়পুর উপজেলার মোল্লার হাট পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাঁধটি সংস্কার হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় স্থাপন হবে।  

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম বলেন, আমন মৌসুমে বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার মধ্যে থাকে। ফলে সঠিক সময়ে আমনের চারা রোপণ করতে পারে না। বেড়িবাঁধ হলে ওই জমিগুলো জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। বাঁধের কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে নানামুখী ফসল উৎপাদন করা যেতে পারে। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। আমন ধান কাটার পরপরই স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন সরিষার আবাদ করা যাবে। এরপর ওই জমিতেই রবিশস্য বা বোরো ধানের আবাদ করতে পারবে কৃষকরা।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানি থেকে স্থানীয়দের ফসল রক্ষা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে লোকালয় রক্ষায় 'ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার এণ্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টটি' হাতে নেওয়া হয়েছে। বাঁধের কারণে মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের পানি কিংবা লবণ পানি লোকালয় এবং ফসলি মাঠে ঢুকতে পারবে না৷ আবার শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারবে কৃষকরা। বাঁধের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জনগণ নানামুখী সুফল ভোগ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।