মাদারীপুর: স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার জন্য দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সজিব সরদার (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাতে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার।
জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার জন্য চার মাস আগে বাড়ি ছাড়েন সজিব ও তার চাচাতো ভাই রাকিব। স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রথমে লিবিয়া পৌঁছান তারা। লিবিয়া যাওয়ার পরই দালাল চক্রের হাত বদল হয়। বন্দি হয় মাফিয়াদের হাতে। এরপর থেকেই চলে নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও বাড়িতে পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা! লিবিয়ার বন্দিশালায় পালাক্রমে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন সজিব ও রাকিব। একপর্যায়ে সজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লিবিয়াতে থাকা আরেক দালালের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজনরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার দালাল বোরহান বেপারীর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেয়। সেখান থেকে সরাসরি ইতালি নেওয়ার কথা বলে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দুই দফা বিক্রি করে সজিবকে। মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। বুধবার সজিবের অবস্থা খারাপ দেখে মাফিয়ারা রাস্তায় ফেলে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে লিবিয়ায় থাকা পরিচিত কয়েকজন সজিবকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে। পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সজিবের বাবা চান মিয়া সরদার বলেন, আমার ছেলেকে দালাল বোরহান ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে বিক্রি করে দেয়। চার মাস আটকে রেখে মারধর করে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। মারতে মারতে আমার ছেলেটা গতকাল মরে গেছে।
নিহত সজীবের বোন শামীমা আক্তার বলেন, দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েও ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। জমি-জমা বিক্রি করে দিছে ওর জন্য। সরকারের কাছে আমার ভাইয়ের লাশ যেন বাড়ি আসে এই দাবি জানাই। আর দালাল বোরহানের ফাঁসি চাই!'
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। মরদেহ আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৫
আরএ