হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী ভরাট হয়ে শায়েস্তানগর, অনন্তপুর ও মাহমুদাবাদ এলাকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবার জলাবদ্ধতার সমস্যায় পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
একঘণ্টা বা আধাঘণ্টার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে ২/৩ দিন সময় লাগে। এ সময় বাসাবাড়িতে হাঁটুসমান পানি জমে থাকে।
ওই তিন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ— তারা প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতা কবলিত হলেও হবিগঞ্জ পৌরসভা এখনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়নি। দায়িত্বশীল এই প্রতিষ্ঠান তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করছে না।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, খোয়াই নদীর অনন্তপুর মার্কাজ মসজিদ থেকে শাহজালাল জামে মসজিদ পর্যন্ত অংশ দুইদিকে দখল হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। খালের সমান জায়গা নদীর অস্তিত্বের জানান দিলেও তাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরে রাখা হয়েছে। এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত নদীতে ময়লা ফেলে যাচ্ছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হকের শায়েস্তানগর এলাকার বাসা বর্ষাকালের বেশিরভাগ সময় পানিবন্দি থাকে। তার ভাই মোঃ নূরুল হক কবির বাংলানিউজকে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে হাঁটু পানি জমে থাকে। সকালে বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য রাতভর সেচকাজ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে অতিরিক্ত একটি পানির পাম্প কিনেছি।
এ ব্যাপারে কথা হয়— শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আব্দুল কাদির, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী শহিদ মিয়া, প্রবাসী নাজমিন আক্তার, ব্যাংকার সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ ও মুদি দোকানি লেচু মিয়ার সাথে।
তারা জানান, দুইদিকে দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে পুরাতন খোয়াই নদী খালে পরিণত হয়েছে। বাকি অংশও এলাকাবাসী ময়লা ফেলে ভরাট করে রেখেছেন। প্রায় দশ বছর ধরে পৌরসভা এখানকার ময়লা অপসারণ করেনি। এখন নদীতে পানি নিষ্কাশন হয় না। মাঝেমধ্যে পৌরসভার লোকজন আসলেও দায়সাড়া গোছের কাজ করে চলে যান। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই বসতঘরে হাঁটুপানি জমে যায়।
এসব পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, টানা খড়ার পর সম্প্রতি হবিগঞ্জে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় হবিগঞ্জ শহরের কোথাও পানি না থাকলেও শায়েস্তানগর, অনন্তপুর ও মাহমুদাবাদ এলাকাবাসীকে কয়েক ঘণ্টা পানিবন্ধি হয়ে থাকতে হয়েছে।
গৃহিনী তামান্না চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতার সময় শিশুদের শোবার খাটে বসিয়ে রাখতে হয়। রান্নাঘরে পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি প্রবেশ করে। পানি নেমে যাওয়ার পরও কয়েকদিন দুর্ঘন্ধ লেগে থাকে। বর্ষাকালে কয়েকদিন অন্তর একদিন/দুইদিন করে এভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়।
সাংবাদিক আব্দুল কাদির বলেন, খোয়াই নদী ভরাট হয়ে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা শুধু আবাসিক এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে বৃষ্টি হলেই কোমড় পানি জমে। এই নাগরিক দুর্ভোগ পৌরসভার কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। বারো বছর ধরে অসংখ্যবার তাদের বরাবর আবেদন জানানোর পরও নদী থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণ করে এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। এ ঘটনা দুঃখজনক।
হবিগঞ্জ পৌরসভার সচিব জাবেদ ইকবাল চৌধুরী শায়েস্তানগর, অনন্তপুর ও মাহমুদাবাদ এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, চৌধুরীবাজার এলাকায় পৌরসভার একটি বড় কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই খোয়াই নদীর শায়েস্তানগর অংশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এমএম