ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোট ক্লাবে ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম সাবেক আইজিপি বেনজীরের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
বোট ক্লাবে ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম সাবেক আইজিপি বেনজীরের বেনজীর আহমেদের আর্থিক অনিয়ম প্রসঙ্গে ঢাকা বোট ক্লাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ঢাকা বোট ক্লাব থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অপরাধে ক্লাবটি তার সদস্যপদ বাতিল করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে আশুলিয়ার বিরুলিয়ায় অবস্থিত ক্লাবটির রিভার ভিউ লাউঞ্জে ‘বিগত সভাপতি বেনজীর আহমেদের আর্থিক অনিয়ম’ প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ক্লাবের বর্তমান সভাপতি নাসির মাহমুদ।

বেনজীর আহমেদ নানা প্রভাব খাটিয়ে ক্লাবের সভাপতির পদ দখল করে রেখেছিলেন। এ সময়জুড়ে তার স্বাক্ষরিত কাগজপত্রে ৩২ কোটি টাকা লোপাটের অনিয়ম পাওয়া গেছে জানিয়ে বোট ক্লাবের বর্তমান সভাপতি বলেন, এই ৩২ কোটি টাকা কতখানি সঠিক, বাড়বে না কমবে, এর জন্য আমরা দেশের স্বনামধন্য চার্টার্ড একাউন্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছি। এটা নিশ্চিত থাকেন ৩২ কোটি থেকে ২-৪ কোটি টাকা কমতে পারে, এর খুব বেশি কমবে না। পারলে বাড়তে পারে।

নাসির মাহমুদ আরও বলেন, আমাকে তিনি (বেনজীর আহমেদ) তিন বছর ক্লাবে আসতে দেননি। আমি বোট ক্লাবে আসলে গুম করা হতো, আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হতো। তার বাহিনী দিয়ে সে অনেক কিছুই করতে পারতেন। তার অনেক ক্ষমতা ছিল, আমি শুধুমাত্র একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তার সাথে ফাইট দেওয়ার মতো অবস্থান আমার ছিল না। আমি কিন্তু ছাড়িনি, আইনি লড়াই করে গেছি। আমি তিনবার তার নামে লিগাল নোটিশ দিয়েছি।

পরীমনি কাণ্ডের সঙ্গে বেনজীরের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির মাহমুদ বলেন, পরীমনি কাণ্ডের পরে আমি তিন বছর বোট ক্লাবে আসতে পারিনি। আমি যেভাবে হেনস্তা হয়েছি, সেভাবে হেনস্থা হওয়ার কথা ছিল না। পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য না। সে কারও গেস্ট হয়ে ক্লাবে এসেছিলেন। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী, সদস্যদের গেস্ট আনতে অনুমতি লাগে। তার (পরীমনির) কোনো অনুমতি ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী ওই সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, কেন অনুমতি ছাড়া ক্লাবে আনা হলো তাকে (পরীমনিকে)। আমি প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

সংবাদ সম্মেলনে নাসির মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন প্রকার চাপে প্রেসিডেন্ট পদটি একজনের (বেনজীর) জন্য আমরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে নির্বাচন দেওয়া, নানা নিয়মের বিষয়ে কোনো ধার ধারেননি বিগত সভাপতি বেনজীর আহমেদ। তিনি শুধু সময়ক্ষেপণ করেছেন।

বোট ক্লাবের সভাপতি তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো বেনজীর আহমেদ পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন হয়েছে তা নয়, তিনি থাকতেই কিন্তু নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে একাধিকার নোটিশ দেই, সংবিধান মতে প্রতিবছর নির্বাচন দেওয়ার জন্য। বিগত ২৪ জুন ওনাকে উল্লেখ করে নোটিশ দেই ২০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি চরম ক্ষমতায় থাকার মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন।

নাসিক মাহমুদ বলেন, ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডের কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে ক্লাবের বিগত কার্যনির্বাহী পর্ষদের সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ক্লাব সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের তদন্ত কার্যক্রম ও তার ফলশ্রুতিতে অনিয়মের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে স্বনামধন্য অডিট ফার্মের অডিটের মাধ্যমে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডের প্রথম নির্বাচিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিগত ক্লাব প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে অন্যান্য শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
এমএমআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।