ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২, ০৪ মে ২০২৫, ০৬ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

রাজনৈতিক দলগুলো একান্তভাবে শ্রমিকদের কথা বলে না: বাংলা একাডেমির সভাপতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০৭, মে ৩, ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলো একান্তভাবে শ্রমিকদের কথা বলে না: বাংলা একাডেমির সভাপতি ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশের রাজনৈতিক দলগুলো শ্রমিকদের কথা মুখেমুখে বলে কিন্তু একান্তভাবে কোনো দলই শ্রমিকদের কথা বলে না মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির মৌলিক সমস্যা হলো সদিচ্ছার অভাব।

এটা একেবারেই দূর করা সম্ভব না হলেও কিছু ক্ষেত্রে কমানো যাবে। এজন্য আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। শ্রমিকদের কী করে কল্যাণ সাধন হবে সেই উপায় বের করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো।

শনিবার (৩ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জনতা পার্টি বাংলাদেশের (জেপিবি) মহান  মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জনতা পার্টির বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

সভায় প্রধান বক্তা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও জনতা পার্টি বাংলাদেশের উপদেষ্টা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের সমস্যা আসবে সেগুলো সমাধান করে নতুন করে এগিয়ে যেতে হবে। অনেক রাজনৈতিক দল শ্রমিকদের কথা বলেন। তবে একান্তভাবে কোনো দলই শ্রমিকদের কথা বলতো না। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে শ্রমিকরা বেশি সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের ৫ থেকে ৭ বছর যাওয়ার পরে শ্রমিকদের আন্দোলন কী আছে আর। নানা কৌশলে মালিক এবং সরকার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। তবে শ্রমিকদের অবস্থা এখন অনেক বড়। এখন শ্রমিকদের কী করে কল্যাণ সাধন হবে সে উপায় বের করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাদের জীবনের উন্নতির জন্য। আর এটা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব হবে না। আর ট্রেড ইউনিয়ন কি আসলেই শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করেন? আমরা তা মনে করি না।

বাংলা একাডেমির সভাপতি বলেন, রাজনীতি বলতে কি বুঝায়, রাজনীতি কি আছে দলগুলোর মধ্যে। সংবিধানে যাই লেখা থাক। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি হারিয়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলো। এখন আমাদের রাজনীতি বিশ্বব্যাংকসহ অর্থনৈতিক তহবিলগুলো নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে৷ জনতা পার্টি বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য। এখন তারা যদি সফলভাবে যাত্রা করতে পারে তাহলে আমরা আনন্দিত হবো। রাজনৈতিকে নানা কৌশলে বিলুপ্ত করে দেওয়ার ফলে রাজনৈতিক দল এখন গঠন করা অনেক বেশি কঠিন হয়েছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি ত্যাগ শিকার করে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে।

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, দেশ একটা শূন্যতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলছে। মানুষের অধিকারের কথা বলা হলেও, প্রতিষ্ঠার দিকে কোনো অগ্রসর নেই। আমাদের সমস্যা যেমন বেশি সম্ভবনাও অনেক বেশি। অবশ্যই আমরা চাই জানতা পার্টি বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতপক্ষে একটা রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবেন। আমাদের দেশে উন্নত রাজনীতির আশা করলে বর্তমান বা সমসাময়িক বিষয়ের উর্ধ্বে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির মৌলিক সমস্যা হলো সদিচ্ছার অভাব। এটা একেবারেই দূর করা সম্ভব না হলেও কিছু ক্ষেত্রে কমানো যাবে। এজন্য আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষের নিরাপত্তাহীনতার অভাব। সরকারই ছিলে এক সময়ের নিরাপত্তাহীনতার অবস্থানে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এগুলো থেকে দেশটাকে বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্রমানে নির্বাচন নয়, নির্বাচনের সঙ্গে আরও অনেক বিষয় রাখতে হয়। সমাজ প্রকৃতি সব পরিবর্তনশীল গণতন্ত্রণের ধারণাও পরিবর্তনশীল এগুলো আমাদের দেখতে হবে। সে চিন্তা চেতনা নিয়ে জনতা পার্টি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক আমরা সে কামনা করি।

প্রধান বক্তা জনতা পার্টি বাংলাদেশের উপদেষ্টা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা পারে না। এজন্য তারা ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে থাকে৷ গত জুলাই-আগস্টে আমাদের ১১৪ জন শ্রমিক জীবন দিয়ে নতুন করে দেশ স্বাধীন করেছে। অথচ আজকে তাদের কথা কেউ বলে না। রাষ্ট্রের কোথায় কত পার্সেন্ট শ্রমিক প্রতিনিধি আছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গার্মেন্টস খাতে ৮ হাজার ২৯৮ জন শ্রমিক জীবন দিয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি চেয়েছি ৩০ হাজার টাকা৷ একই সঙ্গে জাতীয় মজুরি বোর্ড চেয়েছি। এছাড়া যার যার খাতে মজুরি নির্ধারণ করবে। এজন্য মজুরি বোর্ডের সহায়তা নিতে হবে৷ শ্রমিকদের পেনশন দিতে হবে। আইএলও এর হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাবন করে ২৭ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক। প্রতিবছর। আর আহত ৩৭ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক। ৫০ লাখ নির্মাণ শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করে। বাংলাদেশে ৮ কোটি শ্রমিক রয়েছে। এরমধ্যে ৩-৪ শতাংশ শ্রমিক সংগঠিত। শ্রমিকরা যাতে ন্যায্য মজুরি পায়, তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য জনতা পার্টি গঠন করা হয়েছে।  

সভাপতির বক্তব্যে গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা। আমরা যাত্রা শুরু করেছি মাত্র ৮ দিন। আমরা জনতা পার্টি করেছি সকলের ইনসাফ করবো বলে। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটা মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার মতো বাংলাদেশ করতে চাই।

তিনি বলেন, গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আমো দেশকে শোষনমুক্ত বৈষম্যমুক্ত করতে পারিনি। কিন্তু ২৪ এর জুলাই-আগস্টে দেশের ছাত্র জনতা সেটা করে দেখিয়েছে। এজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সেটা প্রতিষ্ঠা করতেই এ জনতা পার্টি করা হয়েছে। ন্যায্যতা, সাম্য প্রতিষ্ঠা না হলে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে না। দেশে ৬ কোটি শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বকৃীতি নেই। ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৬৮ শতাংশ মালিক সেটা বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে এর আইন সংশোধন করা দরকার।  

জিসিজি/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।