ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৩ জুন ২০২৫, ০৬ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন সুব্রত বাইন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৯, জুন ১, ২০২৫
যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন সুব্রত বাইন সুব্রত বাইন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ১৯৮৩ সালের রাজধানীর মগবাজারে ব্যাডমিন্টন খেলায় মাকে তুলে গালি দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে প্রথম গুরুতর আহত করেন সুব্রত বাইন। এ ঘটনায় তাকে জেলে যেতে হয়।

প্রায় ১৮ মাস জেল খাটেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন এ শীর্ষ সন্ত্রাসী।

সুব্রত বাইনের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আমি ১৮ বছর বয়সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যোগ দিই। একদিন মগবাজারে ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। তখন আমার মাকে তুলে গালি দেয় একজন। এর প্রতিশোধ নিতে একজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করি। ১৯৮৩ সালের ওই ঘটনায় আমাকে জেলে যেতে হয়। প্রায় ১৮ মাস জেল খাটি। জেলে থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় ওই সময়কার সন্ত্রাসী-অপরাধীদের সঙ্গে। পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যোগ দিই।

তিনি বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় সংশোধিত না হয়ে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রপ্ত করার ব্যাপক সুযোগ পাই। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে তা কাজে লাগাই।

জানা যায়, সুব্রত বাইনের পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। জন্ম ১৯৬৭ সালে, ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। পৈতৃক বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে। বাবা বিপুল বাইন ছিলেন একটি এনজিওর গাড়িচালক। মা কুমুলিনি বাইন ও তিন বোন মেরি, চেরি ও পরীকে নিয়ে মগবাজারে বাস করতেন তারা। শৈশবে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও পরে ঢাকায় চলে আসেন। এসএসসি পাস করে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলেও কলেজে আর যাওয়া হয়নি তার। এক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে অপরাধ জগতে পা রাখেন।

১৯৯৩ সালে মধুবাজারে এক সবজি বিক্রেতাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের নজরে আসে তার নাম। এরপর বিশাল সেন্টারে চাঁদাবাজি নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে আসে সুব্রতের নাম। ধীরে ধীরে মগবাজারে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। স্থানীয় রাজনীতিকদের আশ্রয়ে হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া।

১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারে নেতৃত্ব দেন সুব্রত। সিদ্ধেশ্বরীর খোকন, মগবাজারের রফিকসহ অনেককে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালে আগারগাঁওয়ে মুরাদ হত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রাজনীতির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলেন সুব্রত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে মগবাজার এলাকায় কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি সুব্রতকে ‘তারকা সন্ত্রাসীর’ তকমা দেয়। পরে যুবলীগের লিয়াকতের সঙ্গে মগবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।

১৯৯৭ সালে নয়াপল্টনের একটি হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশের এসি আকরাম হোসেন তাকে গ্রেপ্তার করেন। বছর দেড়েক জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সরকারের প্রকাশ করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় শীর্ষে ছিল তার নাম। ২০০১ সালে ইন্টারপোলও তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে। সেই নোটিশ এখনো জারি রয়েছে। ইন্টারপোলে নোটিশ জারির পর কলকাতায় পালিয়ে যান সুব্রত বাইন। সেখানেও অপরাধের জগতে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপাল, আবার ধরা পড়েন। শেষবার ২০১২ সালে কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুব্রত বাইন।

ডিবি সূত্র জানায়, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে ভারতে চারটি মামলা ছিল। একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তিনটি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০২২ সালের বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয় সুব্রতকে।  

সূত্র আরও জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিষয়ে অনেক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ছদ্মনামে তিনি কীভাবে পাসপোর্ট তৈরি করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৭ মে) কুষ্টিয়া শহর থেকে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। বাকিরা হলেন মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ও শরীফ। পরদিন বুধবার হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সুব্রতকে আটদিন আর মোল্লা মাসুদসহ বাকি তিনজনকে ছয়দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।

মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।