ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

বৃষ্টি-কাদায় জমজমাট রাজধানীর পশুর হাট, চলছে দর কষাকষি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৩৯, জুন ৪, ২০২৫
বৃষ্টি-কাদায় জমজমাট রাজধানীর পশুর হাট, চলছে দর কষাকষি  ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের হাটের একপাশে তখনো বৃষ্টি-কাদামাটিতে দাঁড়িয়ে গরুর দরদাম চলছিল। হাটের একপাশে হঠাৎ উত্তেজনা! একটি মাঝারি আকারের গরু কিনে হাসিল পরিশোধ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ক্রেতা।

মিনিটখানেক যেতে না যেতেই গরুটি দড়ি ছিঁড়ে দিল এক দৌড়! হাটের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেল।  

‘গরু পালায়, গরু পালায়!’ হাঁক দিতে দিতে বিক্রেতা ও হাটের কর্মচারীরা পেছনে ছুটলেন। মিনিটখানেকের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার পর সবাই মিলে শেষমেশ গরুটি ধরে আবার ক্রেতার হাতে ফিরিয়ে দিলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে ক্রেতা বললেন, ‘যাক বাবা! অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে বাঁচা গেল’।  

এমন ছোটখাটো ঘটনা রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে যেন এখন এক ভিন্ন মাত্র যোগ করেছে। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলেও থেমে নেই বৃষ্টি। এই বৃষ্টি আর কাদার মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পশুর হাটগুলো। বেচাকেনা এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে না পৌঁছালেও শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়ার আশায় বুক বাঁধছেন বিক্রেতারা।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মিলিয়ে এবার রাজধানীতে মোট ২০টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দক্ষিণে ৮টি এবং উত্তরে ১২টি হাট।

বুধবার (৪ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গার হাট, মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার হাট এবং রামপুরার পূর্ব হাজিপাড়ার ইকরা মাদ্রাসার খালি জায়গার হাট ঘুরে দেখা গেল কোরবানির পশুতে ঠাসা প্রতিটি হাট। রাজশাহী, নওগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক খামার থেকে আনা হয়েছে ছোটখাটো দেশি গরু থেকে শুরু করে সুঠাম দেহের শাহওয়াল, সিন্ধি, কিংবা ব্রাহমা জাতের গরু। এসব কোরবানির পশু কিনতে বৃষ্টি কাদা উপেক্ষা করেই হাটে আসছেন ক্রেতারা।  

খিলগাও ফ্লাইওভার নিচ থেকে রেলওয়ে কলোনি পর্যন্ত বিস্তৃত শাহজাহানপুর হাট, কাদার মধ্যেই চলছে দরদাম: 

উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গার হাটটি আমতলা মসজিদের নিচে ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে পুরো শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ভিতর পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। এই হাটে কাদার মধ্যেই চলছে দরদাম। ক্রেতারা খুঁটিয়ে দেখছেন গরু, আর বিক্রেতারা হাঁকছেন দাম।

ঝিনাইদহ থেকে ট্রাকে করে শাহজানপুর হাটে ১৫ টি গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতা গোলাম কিবরিয়া। জানালেন, এবার গরুর দাম একটু বেশি। বৃষ্টি আর কাদার কারণেও ক্রেতা কম। কিন্তু আশা করি, কালকে থেকে বিক্রি বাড়বে।

পাশেই এক ক্রেতা পরিবার নিয়ে পছন্দের গরু খুঁজছেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘অনেক ঘুরছি, কিন্তু দাম এখনো পোষাচ্ছে না। দেখি, শেষ পর্যন্ত কী হয়। ’ দরদামের এক মুহূর্তে দেখা গেল, এক বিক্রেতা একটি শাহওয়াল জাতের গরুর দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা, কিন্তু ক্রেতা কোনোভাবেই আড়াই লাখের উপরে উঠতে রাজি নন। দীর্ঘ বিতণ্ডার পর শেষ পর্যন্ত ক্রেতা মুখ কালো করে চলে গেলেন।

তবে আজকে শাজাহানপুর হাটের হাসিল ঘরগুলোতে দেখা গেল ক্রেতাদের ছোটখাটো জটলা। অনেকে গরু কিনে হাসিল পরিশোধ করছেন। হাসিল ঘরের দায়িত্বে থাকা একজন বললেন, বৃষ্টি ও কাদার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু মানুষ আসছে। আশা করছি, ঈদের আগের দিন বিক্রি আরও বাড়বে।

মেরুল বাড্ডা: ছোট পরিসরে বিপুল পশুর সমাহার

মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার হাটটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পেছনের খালি জায়গায় মাছ বাজারের অংশে ছোট পরিসরে বসেছে। তবে এই ছোট পরিসরের ভিতরই ব্যাপক সংখ্যক কোরবানির পশু আনা হয়েছে। একসময় আফতাবনগরে কোরবানির পশুর হাট বসলেও আবাসিক এলাকা হওয়ায় গত দুই বছর ধরে তা বন্ধ। তাই এবার মেরুল বাড্ডার এই অংশে হাট বসায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।

মানিকগঞ্জ  থেকে আসা এক খামারি জানালেন, ছোট জায়গা হলেও ক্রেতা ভালোই আসছে। তবে কাদার কারণে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।

রামপুরা: নতুন হাটে নতুন আশা

রামপুরার পূর্ব হাজিপাড়ার ইকরা মাদ্রাসার খালি জায়গায় হাটটি রামপুরা টিভি সেন্টার থেকে আবুল হোটেল যাওয়ার পথে প্রধান সড়ক থেকে গলির ভেতরে। এই বছরই প্রথম বারের মতো এই হাট বসেছে। এই হাটের ইজারাদার মাহবুব হাছান।

নতুন হাট হওয়ায় বিক্রেতারা আশা করছেন ভালো বিক্রির। কুষ্টিয়া থেকে আসা এক বিক্রেতা বলেন, প্রথমবার এখানে আসছি। মানুষজন এখনো অতটা চেনে না। তবে গরু এনেছি ভালো মানের। আশা করি, ক্রেতা পাবো।  

তার পাশেই একটি মাঝারি আকারের দেশি গরুর দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার এক প্রাণবন্ত আলোচনা। বিক্রেতা ৮৫ হাজার টাকা চেয়েছেন, কিন্তু ক্রেতা কিছুতেই ৭০ হাজারের বেশি দিতে রাজি নন। পরে এক মধ্যস্থতায় দাম ঠিক হয় ৭৮ হাজার।  

ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়ার আশা নিয়ে সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।