ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৬ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

ঝুঁকি নিয়ে রেলসেবা, সম্মাননা পেলেন ৩ কর্মী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪২, জুন ১৯, ২০২৫
ঝুঁকি নিয়ে রেলসেবা, সম্মাননা পেলেন ৩ কর্মী

ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবা ও সুরক্ষায় আত্মনিবেদন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন রেল কর্মীকে সম্মাননা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীতে রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নগদ অর্থসহ সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তাদের হাতে এ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

সম্মাননাপ্রাপ্ত রেল কর্মীরা হলেন, প্রাক্তন এল এম (গ্রেড-১) মো. সাহাব উদ্দিন, কুমিরা রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান নাজমুল হোসেন এবং ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম। এ ছাড়াও বেসরকারি টি.কে. গ্রুপের সিকিউরিটি গার্ড মো. দেলোয়ারকে সম্মাননা জানানো হয়।

গত ১৩ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর রেলস্টেশনের কাছে মহুয়া কমিউটার ট্রেনের পাওয়ার কারে অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন অন্যান্য বগিতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে প্রাক্তন লোকোমাস্টার মো. সাহাব উদ্দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জ্বলন্ত বগির কাছে গিয়ে পাওয়ার কারের সাথে বগির সংযোগস্থলের হুক খুলে দেন। তার এই অদম্য সাহসিকতা ও কর্মতৎপরতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষা পায় ওই ট্রেন ও ট্রেনের যাত্রীরা।

১ এপ্রিল চট্টগ্রামের কুমিরা রেলক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনের সময় ডাউন মালবাহী ট্রেন ৬০৪ আসার আগে নিয়ম মাফিক গেইট বন্ধ করে দেন গেটম্যান নাজমুল হোসেন। এ সময় একটি অটোরিকশায় রোগী আছে দাবি করে কিছু ব্যক্তি গেট খোলার অনুরোধ জানালে সে দ্রুত গেট খুলে দিয়ে অটোরিকশা পার করে দেয়। এর দুই/তিন মিনিট পর ওই ব্যক্তিরা পুনরায় গেট খোলার অনুরোধ জানায়। ট্রেন ওই গেটের নিকটবর্তী থাকায় তিনি গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তিরা গেটম্যান নাজমুল হোসেন ও সিকিউরিটি গার্ড মো. দেলোয়ারকে নৃশংসভাবে প্রহার করে আহত করে। এরপরও তারা কর্তব্যনিষ্ঠ থেকে গেট না খুলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম হন।

৪ এপ্রিল চার নম্বর ডাউন কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া স্টেশনে বিপুল সংখ্যক টিকিটবিহীন যাত্রী জোরপূর্বক পাওয়ার কারে প্রবেশের টেষ্টা করে। এ সময় ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম ওই পাওয়ার কারের অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সেসব যাত্রীদের পাওয়ার কারে উঠতে বাধা দিলে তাদের একটি অংশ তাকে আক্রমণ করে এবং তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, এই তিন রেল কর্মী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের একজন সিকিউরিটি গার্ড নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন রেলসেবা নিশ্চিত করতে এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে যাত্রী ও ট্রেনকে রক্ষা করেন। তাদের এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে গৌরবময় একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। রেলওয়ের সেবা ও যাত্রী সুরক্ষায় তাদের এই অসামান্য অবদানের জন্য তাদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বিগত ঈদে যথাসাধ্য নির্বিঘ্ন ও ঝামেলামুক্ত ট্রেনযাত্রা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য রেলপথ উপদেষ্টা রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানান।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।