প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চতম পর্যায় থেকে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের ব্যাপারে পূজার্থীদের যতই আশ্বস্ত করা হোক না কেন, পূজার প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা কোনোভাবেই আশান্বিত হতে পারছেনা। বরং আশঙ্কা ও উদ্বেগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এক প্রেস বিবৃতিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী কমপক্ষে ৯টি পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে—
ঘটনা-১
গত ২ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের হামিন্দপুরে রাতের আঁধারে দুর্গাপূজার প্রতিমায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশসহ প্রতিমা ও সরঞ্জাম সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রভাত অধিকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-২
গত ১০ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার আয়মা ঝলই মহারানী বাঁধ এলাকার কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সকালে স্থানীয় ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান, এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর পুলিশ একজনকে আটক করে জানায় তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিযোগ, প্রতিবারই অপরাধীদের আড়াল করতে একই কৌশল ব্যবহার করা হয়।
আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৩
গত ১৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের স্বরূপদহ পালপাড়ার রক্ষাকালী মন্দিরে রাত সোয়া আটটার দিকে কার্তিক ও সরস্বতীর প্রতিমার মাথা-হাতসহ হাঁস ও ময়ূরের কিছু অংশ ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অমরেন্দ্র ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৪
গত ১৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার সদর উপজেলার কান্দুলিয়া কালীবাড়ি পূজামণ্ডপে রাতে দুটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মিঠু রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৫
গত ১৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুর নগরের কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে প্রস্তুতকালে থাকা পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বিকেলে কারিগররা কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রবীর দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৬
গত ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর উপজেলার পৌরসভার তাড়িয়াপাড়া এলাকায় একটি পূজা মন্দিরে সাতটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র সূত্রধর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৭
গত ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের রাজারনগর ইউনিয়নের মধুপুর শ্রী শ্রী রক্ষাকালী ও দুর্গা মন্দিরের জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাজারনগর ইউনিয়নের মধুপুর নয়ানগর গ্রামের মৃত মতিনের ছেলে চঞ্চল ও আবুসহ ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। প্রতিপক্ষের হামলায় স্বপন দাস, রঞ্জিত দাস, বলরাম দাসসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ধীরেন দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৮
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের হরিতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে ৬টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে মো. মনজের বিশ্বাস (৫০) নামক এক দুষ্কৃতকারী। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিকাশ কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা-৯
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা। ওই পূজামণ্ডপ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কিছু জেলায় পূজাকেন্দ্রিক সংঘটিত গোলযোগের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
এসব ঘটনায় পূজার্থী জনমনে ভয়ভীতি ও শঙ্কা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে এবং পূজাচলাকালীন দিনগুলোতে অধিকতর সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পূজার প্রাক্কালে বিদ্যমান পরিস্থিতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উৎসব চলাকালীন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আরকেআর/এমজেএফ
