ময়মনসিংহ: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ৬২ বছর পেরিয়ে এমনকি মৃত্যুর পরও ‘ভাষা সৈনিকে’র স্বীকৃতি মেলেনি ময়মনসিংহের ১৯ ভাষা সৈনিকের। তাদের স্মৃতি চিহ্নও নেই কোথায়! কালের স্রোতেই ভেসে গেছে এসব গর্বিত ভাষা সৈনিকের জীবন গাঁথা।
বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে উত্তাল রাজধানী ঢাকার রাজপথের মতো ময়মনসিংহ ছিল আন্দোলন-সংগ্রাম মুখর। জেলা সদরসহ গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ। রাজপথে মিছিল-স্লোগানের পাশাপাশি গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছিলে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে পাকিস্তানিদের তোড়জোড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁও, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের মানুষও। গফরগাঁও ও গৌরীপুরে রেলপথে অবস্থান নিয়েছিল ভাষা বিপ্লবীরা।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক এমপি এম শামসুল হক, জমশেদ আলী, আব্দুল ওয়াহেদ বোকাইনগরী, আব্দুল কুদ্দুছ বোকাইনগরী, খালেদুজ্জামান, হাতেম আলী মিয়া, ডা. এম এ সোবহান, আব্দুস সামাদ, হায়দার আলী আমির উদ্দিন, ছফির উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, ইসহাক উদ্দিন ফকির, মো. আবুল হোসেন, আশুতোষ রায়, মুসলেম উদ্দিন খান, আব্দুল আজিজ মন্ডল, মতিউর রহমান, অধ্যাপক শামসুল বারী ও মোস্তফা এম এ মতিন।
তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন সরকার হুলিয়া জারি করেছিলেন। তবে তাদের দুর্বার আন্দোলন দমাতে প্রশাসন ছিল বেকায়দায়। অনেকেই জেল-জুলুমেরও শিকার হন।
এদিকে গফরগাঁওয়ের পাচুয়ার (বর্তমানে জব্বার নগর) সন্তান ছিলেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার। ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহ তার জন্য গর্বিত। কিন্তু বাকি ভাষা সৈনিকদের মৃত্যুর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভ রয়েছে।
বেঁচে থাকতে ঈশ্বরগঞ্জের ভাষা সৈনিক মুসলেহ উদ্দিন খান (৯৯) এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ময়মনসিংহ জেলার নাসিরাবাদ হাই মাদ্রাসার নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯৫২ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ময়মনসিংহ শহরের বিপিনপার্কে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভা থেকে তিনিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মনসুর আহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন ভুইয়াসহ অনেকেই।
বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনের প্রয়াত এ সৈনিকদের ৬৪ বছর পরেও স্বীকৃতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনেরা।
গৌরীপুরের প্রয়াত ভাষা সৈনিক ডা. এম এ সোবহানের ছেলে সাদেকুর রহমান সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা ভাষার জন্য আমার বাবা আন্দোলন করেছেন। জীবিত অবস্থায় তাকে কোন স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রের উচিত ভাষা সৈনিকদের সম্মান জানানো।
প্রয়াত ভাষা সৈনিক এম এ হাতেম মিয়ার ছেলে হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, এ অঞ্চলের ভাষা সৈনিকরা আন্দোলন করেছিলেন তাদের কথা কেউ মনে রাখেনি। সরকার তাদের মৃত্যুর পর সম্মান জানাতে পারে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের ভাষা সৈনিকদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের অবদানকে স্মরণ রাখা প্রয়োজন। এতে নতুন প্রজন্ম তাদের বীরত্ব গাঁথা জানতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪