ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আজ আমি আনন্দিত, আমি গর্বিত : লুৎফা তাহের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১
আজ আমি আনন্দিত, আমি গর্বিত : লুৎফা তাহের

ঢাকা: ‘আজ আমি আনন্দিত, আমি গর্বিত। ’ সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির রায়কে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করার পর তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এভাবেই তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

 

লুৎফা তাহের বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে বিচার চেয়ে আসছি, স্বামীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া দেশদ্রোহীতার কলঙ্ক মাথায় নিয়ে ঘুরেছি। আজ তার অবসান হয়েছে। ’

লুৎফা সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, তাহের সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। ’

তিনি বলেন, ‘যখন তাকে (তাহেরকে) ফাঁসি দেওয়া হয়, তখন কেউই বিশ্বাস করেনি, তাহের দেশদ্রোহী ছিলেন। আদালতের রায়ে আজ তাই প্রমাণিত হলো। ’

তিনি বলেন, ‘যারা কর্নেল তাহেরকে হেয় করার জন্য অপচেষ্টা করেছিলো, এ রায়ের মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হলো। ’

ড. আনোয়ার হোসেনের প্রতিক্রিয়া:  ‘বাবা-মা আজ বেঁচে নেই। যে পিতা-মাতার সব সন্তান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, যাদের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জীবিতদের জন্য দেওয়া সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন, তারা মারা গেলেন এই দুঃখ নিয়ে, তার সন্তানের দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু আজ দেশের আদালত মেনে নিয়েছে তারা দেশদ্রেহী ছিলেন না, দেশপ্রেমিক ছিলেন। কিন্তু আমাদের দুঃখ তারা তা দেখে যেতে পারলেন না। ’

কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার ও ফাঁসিকে অবৈধ বলে ঘোষণার আর্জি জানিয়ে প্রধান রিটকারী ঢাবি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৩৫ বছর আগে কারাগারের ভিতর তথাকথিত বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এছাড়া  আরও ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ’

তিনি বলেন ‘৩৫ বছর ধরে কেবল তাহের পরিবার নয়, দেশের সমস্ত মানুষ, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের সবার অপেক্ষা ছিলো। সে অপেক্ষার পালা আজ শেষ হয়েছে। ’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ কোনো বর্বর দেশ নয়। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারছে। ’

তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক রায়ে আদালত বলেছে তাহের দেশদ্রোহী ছিলেন না, বরং  মহান ব্যক্তি ছিলেন, দেশপ্রেমিক ছিলেন। ’

আদালত এও বলেছেন, ‘এটি ছিলো খুন এবং প্রধান হত্যাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। ’

এছাড়াও আদালত বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার জন্য জিয়াউর জড়িত ছিলেন কিনা তা তদন্তে কমিটি গঠন করতে বলেছেন বলেও জানান আনোয়ার হোসেন।

তাহেরের মেয়ে জয়া তাহেরর প্রতিক্রিয়া: এ দিনটির জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করেছিলাম। এতোদিনের সমস্ত কষ্ট, অপমান আজ দূর হয়ে গেলো। বাবাকে আজ খুব মনে পড়ছে।

তাহেরকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয় তার মেয়ে জয়া তাহেরের বয়স ছিলো মাত্র পাঁচ বছর। স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের বাসায় বাবার সঙ্গে ঘুমাতাম। তার সঙ্গে চকলেট পাল্টিয়ে খেতাম।

পুত্র আবু কায়সার যিশুর প্রতিক্রিয়া: আজ বাবার কোনো স্মৃতিই আর মনে নেই। আজ খুবই ভালো লাগছে। আজ আরো ভালো লাগছে যে শুধু বাবারই নয়, তার সঙ্গে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিলো তা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবু কায়সার যিশু কর্নেল তাহের ছেলে।

মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফ শুলজের প্রতিক্রিয়া: ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমন সময় আদালতের এই রায় বিশেষ একটা কিছু। আদালতের এই রায় এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপ্ত আহ্বান হিসেবে কাজ করবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা বাংলাদেশ এবং তাহেরের পরিবারের জন্য বিশেষ দিন। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।