ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তানেরা যেখানে চায় সেখানেই থাকতে চাই

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৫
সন্তানেরা যেখানে চায় সেখানেই থাকতে চাই ড. এম আব্দুল আউয়াল/ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের বাসিন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক (অব.) ড. এম আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে ১৮ জুলাই (শনিবার) বাংলানিউজে ‘ওরা আমাকে এতো কষ্ট দেয় কেনো’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরবর্তীতে প্রতিবেদনটি ‘রাজশাহী এক্সপ্রেস’, ‘প্রিয়.কম’, ‘আমাদের সময়.কম’সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও কপি করে ছাপা হয়।

যদিও কপি করা নিউজে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে বলে অধ্যাপক ও তার পরিবারের অভিযোগ।

তবে তার সন্তানের দাবি, ‘প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিকভাবে আমরা অনেক হেয় হয়েছি, আর না’।
               
বাংলানিউজের প্রতিবেদনটি নিয়ে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা উঠে আসে। বিষয়টি অধ্যাপক আউয়ালের সন্তানদের নজরে আসে। বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) রানা ইফতেখার হাসান (বাদল) বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাবার ঘটনার বর্ণনা দেন। এরপর বাংলানিউজ প্রতিবেদক তার পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের নিয়ে শুক্রবার (৩১ জুলাই) আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে যান। সেখানে বাদলের বাবা অধ্যাপক আউয়ালসহ ১০/১২ জন বসে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়।
 
আলোচনাকালে অধ্যাপক আউয়াল বলেন, অতীতের সব ভুলে যাও, আমাকে ক্ষমা করো। ‘ফরগিভ মি, ফরগট ইট! আমার সন্তানরা আমাকে এখন যেখানে রাখতে চায়, আমি সেখানেই থাকতে চাই। ’
 
এরপর তার বড় ছেলে রানা ইফতেখার হাসান বাদল বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাবার সঙ্গে বসবো। তারপর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো তিনি কী চান! আমার বাবা যদি আমার সঙ্গে থাকে, আপত্তি নেই। যদি তিনি আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে চান, তাও ভাড়া করে দেওয়ার সামর্থ্য আমার আছে; আমি দেবো। বাবাকে আমি কোনোভাবেই ছোট করবো না।
 
রানা বলেন, বাবাকে নিয়ে আজই প্রথম বসছি না; এর আগেও ৪/৫ বার বসেছি। যখনই সমস্যা হয়, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সমঝোতা হওয়ার কিছুদিন পর তিনি আবার সব ভুলে যান। আসলে তার বয়স হয়েছে; কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনও!

অধ্যাপক আউয়ালের ভুল স্বীকার
১৮ জুলাই (শনিবার) বাংলানিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তার বড় ছেলে রানা ইফতেখার হাসানের কাছে অধ্যাপকের ৬০ লাখ টাকা ছিল। তবে সন্তানের দাবি, ৬০ লাখ নয়, ২০ লাখ টাকা। তাও বাবা ও ছোটভাইকে দিয়েছি। আমার কাছে কোনো টাকা নেই। তার এই কথা পরে বাবা অধ্যাপক আউয়াল তা স্বীকার করে নেন।

এছাড়া প্রতিবেদনে কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটে নিজের ফ্ল্যাট ছিল আব্দুল আউয়ালের। পল্লবীতেও বেশ কিছু জমি ছিল। কিন্তু এসব বড় ছেলে উইং কমান্ডার ইফতেখার হাসান কৌশলে বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন বলে বলা হয়েছিল।

তবে সন্তান বাবার সামনে বিষয়টি তুললে তিনি বলেন, এটা ভুল ছিল। আমিই ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি। টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলাম।
 
মাতৃত্ব বঞ্চিত ছোটছেলে
রানা বলেন, আমার বাবা আমাদের অনেক যত্নের সঙ্গে আমাদের মানুষের মতো মানুষ করেছেন। আমাদের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তবে আমার ছোটভাই রাকিব ইফতেখার হাসান (কল্লোল) জন্মের দুই মাসের মাথায় বাবা তাকে (কল্লোল) মাতৃত্ব বঞ্চিত করেছিল। সেই থেকে আমার মা ভারসাম্য হারাতে থাকেন। বর্তমানে অনেকটাই ভারসাম্যহীন তিনি। বর্তমানে তিনি আমার সঙ্গেই আছেন। অথচ একদিনও বাবা খবর নেননি।

দুঃখিনী মা
রানা অসহায়ের মতো বলেন, আমি চাকরির সুবাদে দেশের বাইরে ছিলাম। সে সময় ২০০৮ সালের দিকে বাবা আমাকে একবার বলেন, তোমার মাকে আমি আর রাখতে পারছি না; তোমার মাকে নিয়ে যাও।

তখন আমি ভাইবোনদের বলি, আমাদের পরিবারটা মনে হয়, আর ধরে রাখতে পারছি না। হয়ত বাবাকে রেখেই মাকে নিয়ে আমাদের আলাদা হতে হবে। তখন ভাইবোনদের মানসিকভাবে শক্ত হতে বলি। এভাবে ছোট থেকেই বাবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমরা পরিচিত।
 
অধ্যাপক আউয়ালের অপরিণামদর্শিতা
বড় ছেলে রানা ইফতেখার হাসান বাদল তার বাবা অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের অপরিণামদর্শিতা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বলেন, বাবার অর্জিত টাকা অপরিচিত লোকদের কাছে দিয়ে বিভিন্নভাবে ধরা খেয়েছেন।

পল্লবীতে বাবার বেশ কিছু জমি ছিল, সেগুলো খুইয়েছেন। পূর্বাচলে প্লট ছিল, সেই প্লটটি বিক্রি করার জন্য আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে একজনকে দেন। আমি জানতে চাইলে বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবো। সেই এক লাখ টাকাও পরে খুইয়েছেন তিনি। এভাবে তার সব টাকা-পয়সা খোয়া যেতে দেখে আমি তাকে বলি, এভাবে সম্পদ নষ্ট করবেন না। কিন্তু তিনি কখনোই আমাদের কথা শোনেননি। এমনকি পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কারো কথাই শোনেন না।

তিনি বলেন, বাবা সারাজীবনই গোয়ার্তুমি করেছে। আমার মা অসুস্থ, তাও খোঁজ নেননি।

বাবার সামনে বসে এ সব কথা বলার সময় তিনি (অধ্যাপক আউয়ালের) চুপ থাকেন। পরে সব স্বীকারও করেন তিনি।
 
সবার উপস্থিতিতেই তথ্য উদঘাটন
বাবা ও ছেলের কথা বলার সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আউয়ালের ভাতিজা, ভাগ্নে, ভাগ্নি-জামাইসহ আরো অনেকেই।

ভাগ্নে হান্নান সরকার বলেন, মামা, বরাবরই নিজে যা বলতেন,  ঠিক তাই করতেন। এর বাইরে কারো কথা বলার সুযোগ ছিল না। ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তার দ্বিমত করলেই তাদের ত্যাগ করতেন তিনি। মামা একরোখা টাইপের ছিলেন। সে কারণে তার আজ এই অবস্থা।
 
সমাধান চান ছেলে
বড় ছেলে ইফতেখার হাসান বাদল বলেন, যা হয়েছে, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা এখানেই এর শেষ করতে চাই। আমরা আগেও বাবাকে আমাদের কাছে রাখতে চেয়েছি; তিনি থাকেননি। আমরা আবারও নিয়ে যেতে চাই। তাকে আমি আমার কাছেই রাখবো। বাবাকেও বলেছি। তবে তিনি আত্মীয়-স্বজনদের বলেছেন, তিনি কারো কাছে থাকতে চান না। তিনি যদি চান, তবে তাকে আলাদা ফ্ল্যাট করে দেবো। তারপরও আজ (০১ আগস্ট, শনিবার) আমার বাসায় আসার কথা বলছি। আমি তাকে নিয়ে যাবো। যদি তিনি না থাকেন, তাহলে তাকে আলাদা ফ্ল্যাটেই রাখবো।

তারপরও এখান থেকে তাকে নিয়ে যাবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৫
এসএম/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।