ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

চোর সন্দেহে শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
চোর সন্দেহে শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): রাব্বির শরীরে জখমের চিহ্ন। প্রচণ্ড ব্যথা।

ফ্যাকাশে চোখ-মুখে আতংকের ছাপ। জ্বরে কাতরাচ্ছে। সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন বেগম খাতুন। এখন কেমন আছে রাব্বি, জানতে চাইলে মা বেগম খাতুন কিছুক্ষন চুপ থাকেন। তার চোখ বেয়ে পড়ে লোনা জল।

আঁচলে মুছে নেন চোখ। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। একটু দম নেন। সন্তানের মুখের দিকে বারবার ফিরে তাকান। এরপর আবেগ আপ্লুত হয়ে বলতে থাকেন, চোর সন্দেহে রাব্বিকে নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী।

রাব্বি মিয়া। বয়স আনুমানিক আট বছর। বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার মানিকপোটল গ্রামে। বাবার নাম লাল মিয়া। মা বেগম খাতুন। রাব্বি মরিচতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। রাব্বির বাবা স-মিলের শ্রমিক। মা গৃহকর্মী। মা-বাবা লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু লেখাপড়ার মর্ম তারা বোঝেন। তাই একমাত্র ছেলে রাব্বিকে স্কুলে ভর্তি করেন।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সন্তানের পাশে বসে মা বেগম খাতুন বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় রাব্বি। বাড়ি থেকে স্কুলে পৌঁছাতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০ মিনিট। পথিমধ্যে মানিকপোটল গ্রামের কোরবান আলীর (জনশূন্য) বাড়ির ওপর দিয়ে যাচ্ছিল রাব্বি।

এসময় কোরবান আলীর প্রতিবেশী মিষ্টি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান রাব্বিকে চোর সন্দেহ করে। রাব্বি কোরবান আলীর বাড়ির ভিতর চুরির উদ্দেশে ঢুকেছিল। এমন অভিযোগ এনে রাব্বির বুকে আগলে রাখা বই-খাতা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় মারতে থাকে। রাব্বির চিৎকারে একই গ্রামের আল আমিন, মিনার উদ্দিন, হিমেল মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

খলিলুর রহমানের কথায় বিশ্বাস করে তারা রাব্বিকে চোর সাব্যস্ত করে। অন্যদের সহায়তায় খলিলুর রহমান রশি দিয়ে শিশু রাব্বির হাত-পা গাছের সাথে বাঁধে। এরপর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পালাক্রমে পেটাতে থাকে। তখন রাব্বি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে।

রাব্বির এই চিৎকার যেন কেউ শুনতে না পায়, এ জন্য গলায় রশি ও মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা হয়। ধীরে ধীরে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে রাব্বি। এ খবর পেয়ে রাব্বির মা বেগম খাতুন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সন্তানকে ছেড়ে নেওয়ার জন্য নির্যাতনকারীদের কাছে আকুতি জানান। কিন্তু রাব্বির মায়ের কান্নায় হৃদয় গলেনি পাষণ্ড নির্যাতনকারীদের।

দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আবুল কাসেম এ বিষয়টি ধুনট থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে থানার এসআই রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাব্বিকে উদ্ধারের পর বিকেল ৪টার দিকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রাব্বি আমার প্রতিবেশীর বাড়িতে প্রবেশ করে চুরির চেষ্টা চালায়। এসময় আমি সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে রাব্বিকে আটক করি। পরে গ্রামের লোকজন রাব্বিকে দঁড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এর আগে আমার দোকানে কয়েকবার চুরি হয়েছে। সেই চুরির বিষয়ে রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ধুনট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পঞ্চনন্দ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল থেকে রাব্বিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, নির্যাতিত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ১১, ২০১৫
পিসি/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।