ঢাকা: মঈন উদ্দীন। পলিটেকনিক থেকে পাস করে ইন্টার্ন করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
টিউশন ফি’র ওপর ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আহুত অবরোধে পড়ে তার মুখে যথেষ্ট বিরক্তি আর ক্লান্তির ছাপ। কেননা, তেজগাঁও থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছেছেন বনানী সিগন্যালে। ততোক্ষণে অবরোধও উঠে গেছে। তবে গাড়ি চলছে তাল-বেতালে। যাত্রীর এতো চাপ যে, কোনো বাহনই তুলছে না মঈনকে।
শুধু মঈন উদ্দীনই নন, এমন শত শত যাত্রীকে এ গাড়ি থেকে ও গাড়ির পানের ছুটতে দেখা গেছে। কিন্তু বেশিরভাগই রফা করতে পারলেন না। কেউ কেউ গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে গিয়ে ওঠার প্রাণপন চেষ্টা করলেন। কিন্তু ড্রাইভার গতি বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হলো তাদের। কেউ আবার চলন্ত গাড়িতে যেখানে দরজাতেই হ্যান্ডেল ধরে ঝুলছেন অন্তত চার-পাঁচজন, তার মধ্যে লাফ দিয়ে গেঁথে যাওয়ার মতো করে উঠে পড়লেন। যেন চলন্ত মানুষ ওরা।
তবে মঈন উদ্দীনরা বোধহয় একটু ঝুঁকি এড়িয়েই চলেন। তা না হলে, কারওয়ানবাজার থেকে বনানী পর্যন্ত হেঁটে আসার মানুষ এ গতির শহরে মেলা ভার।
এটা ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞেস করলে মঈন উদ্দীন বললেন, ‘ভাই উত্তরা যে কতো দূর! সেই দুই ঘণ্টা ধরে হাঁটছি আর হাঁটছি। ভাবলাম, ফার্মগেট গিয়ে গাড়ি পাবো। সেখানে লোকে লোকারণ্য। লাভ হলো না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে এলাম বিজয় সরণি, সেখানেও একই অবস্থা। এরপর মহাখালী এসে দেখা গেল, প্রায় মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। সেখানেও বৃথা চেষ্টার পর হেঁটে হেঁটেই বনানী চলে এলাম। রাস্তা তো শেষ হয় না’।

সাধারণ নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, তাতে ছাত্রদের দাবির সঙ্গে অনেকে একমত হলেও এ আন্দোলনের সমর্থক কেউ নন। কেননা, সারাদিন পরিশ্রমের পর পরিশ্রান্ত হয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছাটাই তাদের কাছে প্রত্যাশিত। একদিকে ছাত্রদের অবরোধের মতো কর্মসূচি, অন্যদিকে সরকারের সমন্বয়হীনতায় বলির পাঠা তারা হতে চান না।
উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আলাউদ্দীন আল করিম প্রশ্ন তোলেন, রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক বন্ধ করে দিয়ে এ কেমন আন্দোলন? যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা নেই, সেখানে এ আন্দোলন কেন করতে দেওয়া হচ্ছে? সরকারই বা চুপ কেন? ভোগান্তির ওপর এই ভোগান্তি সহ্য হয় না।
মাসুদ কামাল নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা যেমন অধিকার, তেমন অফিস ছুটির পর নির্বিঘ্নে বাসায় ফেরাও অধিকার। তাই নিজের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কেউ অন্যের অধিকার হরণ করতে পারে না। প্রধান প্রধান সড়কে আন্দোলন করতে দিয়ে সরকারও এ ভোগান্তিকে সমর্থন করছে বলেও অভিযোগ তার।
রোববার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর প্রধান সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে ঢাকার বড় বড় সড়কগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সারাদিনই ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। যদিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সড়ক অবরোধ করায় সব প্রতিক্রিয়া এসে পড়ছে সাধারণ মানুষদের ওপরেই।

এদিকে সোমবারও (১৪ সেপ্টেম্বর) সড়কে অবস্থান নেবেন শিক্ষার্থীরা। আর কতোদিন চলবে এ ভোগান্তি- এ প্রশ্নই এখন সবার। শিক্ষার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাস্তায় নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) তারা সব বড় সড়ক অবরোধ করে রাখলে অচল হয়ে যায় পুরো ঢাকা। ওইদিন সন্ধ্যায় ছাত্ররা নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভ্যাট দেবে- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এমন ঘোষণা দিলে রাতে আন্দোলন শিথিল হয়। বর্তমানে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন দাবি’ নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর