ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গৃহস্থালি যত্নে খামারে দেশীয় গরু পালন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
গৃহস্থালি যত্নে খামারে দেশীয় গরু পালন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: এখানে গৃহস্থ বাড়ির মতোই গোয়ালঘরের পরিবেশ, গরুর যত্ন-আত্তিও গৃহস্থ বাড়ির কৃষাণ-কৃষাণীর হাতের মতোই।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বলতে গেলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই গৃহস্থালি বাড়ির পরিচর্যাতেই খামারে পালিত হচ্ছে দেশীয় ষাঁড়।



সেবা ও পরিচর্যার মতো এসব ষাঁড়ের খাবারেও রয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদান। সব ধরনের রাসায়নিক খাদ্য ও স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেটকে সম্পূর্ণ বর্জন করে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে দেশীয় জাতের ষাঁড়কে কোরবানির হাটে তোলার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

গৃহস্থালির আদলে খামারে গরু লালন-পালনের এমন একটি  বেসরকারি প্রকল্প চলমান রয়েছে সিরাজগঞ্জে। এটি বাস্তবায়ন করছে ‘চলনবিল ফিশারিজ লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

ভেজালমুক্ত আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখছে এ প্রকল্পটি। প্রতি বছরই দেশীয় জাতের ষাঁড় উৎপাদন চলছে এ খামারে। এর পাশাপাশি একই খামারে উৎপাদিত হচ্ছে ভেড়া, ছাগল ও মাছ।

সিরাজগঞ্জ শহরের মাছুমপুর মহল্লার মৃত গোলাম মোস্তফার দুই ছেলে কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী গোলাম সারওয়ার ও গোলাম সাদি মিয়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার চৌপাকিয়া এলাকায় ৮৭ বিঘা জমির উপর ২০০৫ সালে এ প্রকল্প চালু করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ১০ বছরেই অনেকদূর এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তৈরি করেছে বিশেষ পরিচিত ও আস্থা। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।

সরেজমিনে চলনবিল ফিশারিজ লিমিটেড ঘুরে জানা যায়,  চলনবিলের চৌপাকিয়া এলাকায় ৮৭ বিঘা জমি নিয়ে এতে প্রথমে ১৭টি পুকুর কেটে মাছচাষের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। মাছের পাশাপাশি চলতে থাকে বনায়ন কার্যক্রম। ‍

সারাদেশে যখন রাসায়ানিক উপাদান ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দ্বারা মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে গরু সরবরাহের রমরমা অবস্থা, তখন প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধার দেশীয় জাতের ষাঁড় উৎপাদনের এ সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের  সিরাজগঞ্জ শাখা। ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটিকে সামনে এগিয়ে নেন উদ্যোক্তা দুই সহোদর।

কথা হয় প্রকল্পের কর্মচারী মনির হোসেন, সুলতান, শাহাদত হোসেন, দুলাল, সিদ্দিক মোহাম্মদ আলীসহ অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, এখানে গরুকে দেশীয় খাবার যেমন, খড়, খৈল, ভূষি ও ঘাস দেওয়া হয়। এছাড়া গরুকে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয় না।  

চলনবিল ফিশারিজ লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার রাশেদুল হাসান রঞ্জন জানান, এখানে গরুর পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার মুরগি পালন করা হচ্ছে। আর গরু ও মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রকল্পের সুপারভাইজার আলমগীর হোসেন জানান, শুধু কোরবানি নয়। সারা বছরই এখানে দেশীয় জাতের ষাঁড় পালন করা হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পে ২৪৬টি গরু রয়েছে। ২ বছর বয়সী গরুগুলো কেনা হয়েছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে। ৫ থেকে ৬ মাস লালন-পালন শেষে এগুলো বিক্রি করা হবে। ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকায়ও বিক্রি হয় তাদের গরু।

এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ১৬০টি গরু বিক্রির প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর বছর ধরে এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের গরুকে ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করা হতো। এতে এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছিল। চলনবিল ফিশারিজের এ ধরনের উদ্যোগের ফলে এখন অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার জানান, আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি, এলাকার কিছু বেকার-যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চালু করেন তারা। গরু, ভেড়া, মুরগি ও মাছ চাষের পাশাপাশি এ প্রকল্পের মাধ্যমে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের। সরকারি সহযোগিতা পেলে সেটা করাও সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু হানিফ বাংলানিউজকে জানান, চলনবিল ফিশারিজে দেশীয় জাতের ষাঁড় পালন প্রকল্পে তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। এখানে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্যেই গরু পালন করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাজহারুল আলম আকন্দ বলেন, প্রকল্পটির কথা শুনেছি। এটা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন নির্ভেজাল মাংস উৎপাদন সম্ভব হবে, তেমনি বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মুনাফাও করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।