ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

চিড়িয়াখানার সামনে নেই গলাকাটা দোকান

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
চিড়িয়াখানার সামনে নেই গলাকাটা দোকান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকা চিড়িয়াখানার আশপাশে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ‘গলাকাটা’ সেইসব দোকান আর নেই। তবে রয়ে গেছে তার প্রভাব।



রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চিড়িয়াখানা এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় গেটের বাইরে যেসব ফাস্টফুডের দোকান ছিলো সেগুলো তালাবদ্ধ। নেই দোকানের সামনে অস্থায়ী ফুসকা, চটপটির দোকানও।

বরাবরই অভিযোগ ছিলো এসব দোকানের উচ্চমূল্য ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে। এখানে ছিলো শতমূল খাবার হোটেল, কাকাতোয়া ফাস্টফুড, ভাই ভাই হোটেলসহ ৫টি হোটেল এবং ফুটপ‍াথ জুড়ে ছিলো ফুচকা, চটপটির দোকান।
 
এখন আর এসব দোকান না থাকলেও চিড়িয়াখানার মূল গেটের ঠিক সামনেই একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে চা সিগারেট, চিপসসহ বিভিন্ন আইটেমের শুকনো খাবার। রাহেলা নামে এক নারী এই দোকান পরিচালনা করেন। ক্রেতা হিসেবে এখানে এক প্যাকেট পটেটো চিপস কিনতে চাইলে দাম চান ১৫ টাকা অথচ প্যাকেটের গায়ে দাম আছে ১০ টাকা। ৫ টাকা বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে গায়ের দামে কিছু বিক্রি হয় না। যাই নেন দুই থেকে ৫ টাকা বেশি দিতে হবে।
 
কেনা তো বেশি দামে না তাহলে বেশি নেবেন কেনো এমন প্রশ্নে বলেন, মন চাইলে নেবেন, না চাইলে নেবেন না। আমাদের বেশি দামে কেনা না হলেও চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। সেই টাকা উঠাইতে হবে না? কারা চাঁদা নেয় জানতে চাইলে বলেন, চিড়িয়াখানার সাহেবরা আছে, স্থানীয় নেতারা আছে। এতো কিছু বলতে পারবো না।

দর্শনার্থীদের বসিয়ে ফুসকা, চটপটি, ড্রিংকস খাইয়ে চাপ দিয়ে আদায় করে নিতেন ৫০০ বা হাজার টাকা। ক্রমেই এসব দোকান গলাকাটা মূল্য নেওয়ার পরিচিতি লাভ করে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সব দোকান বন্ধ করে দেয়। তবে চিড়িয়াখানা সীমানার বাইরের দোকান গুলোও বিদ্যমান রয়েছে।
 
গত রমজান থেকেই চিড়িয়াখানার বাইরের ৫টি খাবার হোটেল এবং ভেতরের ৪টি হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।   রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায় চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় অনেকটাই কম। যারা আসছেন তারা পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করছেন, অনেকে আবার ফিরে যাচ্ছেন।
 
চিড়িয়াখানার সীমানার বাইরে মায়ের দোয়া রেস্টুরেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন খাবার হোটেল, মোমিন খাবার হোটেল, শফিক স্টোরসহ বেশকিছু দোকান রয়েছে। চিড়িয়াখানা ভেতরের দোকান বন্ধ করার পর এসব দোকানে বা হোটেলে খাবার মূল্য তালিকা টাঙানো হয়েছে। দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মূল্য তালিকা টাঙানোর আসল চিত্র।
 
মায়ের দোয়া হোটেলের মালিক মো. সবুজ বাংলানিউজকে জানান, ডাকাত দোকানগুলোর  (গেটের সামনে যেগুলো ছিলো) কারণে আমাদের ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। ওরা মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করতো। বিশেষ করে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা নারীদের দিকে ওদের টার্গেট থাকতো বেশি। ওরা নারীদের জিম্মি করে ডাকাতের মতো এক একটা জিনিসের দাম রাখতো। গত ১৭ রমজানে ওইসব দোকান বন্ধ করা হয়েছে। তবে দর্শণার্থীদের মনে সেই ভয় এখনো রয়েছে। যারা এখানে আসে তারা মনে করে গলাকাটা দাম নেবে তাই কেউ ভয়ে ঢুকতে চায় না। এজন্য আমরা খাবারের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছি। যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয়। আমাদের এখানে যা দাম তাই রাখি। অযথা দুই, পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে কি লাভ? ব্যবসা তো এক দিনের নয়।
 
প্রায় একই কথা বলেন শফিক জেনারেল স্টোরের মালিক মো. শফিক। তিনি বলেন, ওইসব দোকানে এমন কোনো খারাপ কাজ ছিলো না যা হতো না। বিশেষ করে তরুণ, তরুণীরা আসলে ওদের ছাতার নিচে এক একটা কেবিন করে দিয়েছিল, যেখানে অপরাধমূলক কাজ হতো। আর এই সুযোগ উচ্চ মূল্য নিতো প্রতিটি জিনিসের। বন্ধ হওয়ার পর অনেক ভালো হয়েছে। তবে কাস্টমার এখনো আমাদের এখানে সেভাবে আসে না। কারণ ওদের কারণে যে বদনাম হয়েছে সেটা এখনো কাটেনি। এ কারণে আমরা প্রতিটি বার্গার, ফুচকা, চটপটির মূল্য তালিকা দিয়েছি।
 
এদের কথার সঙ্গে সত্যতা মিললো। কয়েকজন দর্শনার্থীকে দেখা যায় চিপস ও কলা রুটি নিয়েই অনেকে এসেছেন চিড়িয়াখানা দেখতে। তবে বন্ধ থাকায় গেটের সামনে কথা হয় কয়েক জনের সঙ্গে।
 
এদের মধ্যে মো. জাহিদুল ইসলাম বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন ফার্মগেট থেকে চিড়িয়াখানা দেখাবেন বলে। হাতে কলা, রুটি। জানতেই চাইলাম এগুলো কি বাইরে থেকে নিয়ে এসেছেন, উত্তরে হ্যাঁ। এখানেই তো দোকান ছিলো তাহলে কষ্ট করে বাইরে থেকে আনলেন কেনো? এমন প্রশ্নে বলেন, এখানে সব কিছুর দাম বেশি রাখে। তাই বাইরে থেকে নিয়ে এসেছি।
 
এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩০ জুনের পর থেকে চিড়িয়াখানার ভেতরে ও বাইরের (চিড়িয়াখানা সীমানার ভেতর) সব দোকান বন্ধ করা হয়েছে। আমরাই এগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। আবার চালু হবে কি না তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না বলে জানান কিউরেটর।
 
দোকান বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা মিডিয়াইতো ভালো জানেন। আপনারা লেখালেখি করেছেন জানেন না? এর বেশি কিছু বলতে পারবো না, এ কথা বলেই ফোন রেখে দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এসএম/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।