ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গা শুমারি প্রকল্প

বরাদ্দ অর্থ ছাড় পেতেই গেল প্রথম ছয় মাস

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
বরাদ্দ অর্থ ছাড় পেতেই গেল প্রথম ছয় মাস ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: প্রকল্প শুরুর জন্য নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পরে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের শুমারি। এর মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় পেতেই পেরিয়ে গেছে প্রথম ছয় মাস।

অর্থ বরাদ্দের জটিলতার কারণেই প্রকল্পটি এখনো শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। কিন্তু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে অবস্থানরত মায়ানমারের অনিবন্ধিত এসব নাগরিক সংখ্যা কত, এর কোনো সঠিক হিসাব নেই।   কারো মতে, এদের সংখ্যা তিন লাখ, কারও মতে আবার চার লাখ। তাই এবার এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শুমারি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলায় থাকা রোহিঙ্গাদের গণনা করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কাজটি করবে।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আগামী বছরের (২০১৬) মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়। কিন্তু গত মে মাসে ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মায়ানমার নাগরিক শুমারি, ২০১৫’ নামে প্রকল্পটি পাস হয়। এরও প্রায় তিন মাস পর গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পের অর্থছাড়ে অনাপত্তি দেয় পরিকল্পনা কমিশন।

মূলত এই অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণেই থেমে ছিল জরিপ কাজ। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে। শুরু হয়নি শুমারির কাজ। আসছে অক্টোবর থেকে কাজটি শুরু করার কথা জানিয়েছে বিবিএস। তবে তার আগে ন্যাশনাল টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। এ বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে কবে থেকে শুরু হবে শুমারির প্রকৃত কাজ।

এদিকে, দীর্ঘদিনের এ বিলম্বের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই  মায়ানমারের নাগরিক গণনার এই কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই (গত বুধবার) প্রকল্পের অর্থছাড় দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এবার নগদ অর্থ পেলেই মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। পররাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে একটি ন্যাশনাল টাস্কফোর্স কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির বৈঠকের পরই শুমারি শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রকল্পটির প্রস্তাবে বলা হয়, সঠিক কোনো হিসাব না থাকলেও মায়ানমারের আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ লাখ নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তে কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে আট থেকে দশজন মায়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এসব রোহিঙ্গা দেশের বনভূমি ধ্বংস করে বাসস্থান গড়ে তুলে পরিবেশের ক্ষতি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শ্রমবাজার ও উপকূলীয় সমুদ্রবেষ্টনী প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তারা।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, শুমারি কাজে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হবে। আর রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় নিবন্ধিত হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান এবং এ দেশে অনুপ্রবেশের আগে মায়ানমারে তাদের মূল বাসস্থানের ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হবে। একইসঙ্গে  তাদের ছবি, অনুপ্রবেশের কারণ, আর্থসামাজিক অবস্থান যাবতীয় তথ্যসহ একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য।

রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা জানার পরই তাদের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করে। তাদের মানবিক চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাংলাদেশের ওপর অব্যাহত অনুরোধ রয়েছে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

তাই ২০১৩ সালে ৯ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত মায়ানমার শরণার্থী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মায়ানমার নাগরিকদের বিষয়ে জাতীয় কৌশলপত্র’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে এ কৌশলপত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় মায়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার প্রণয়নের জন্য বিবিএসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ২৬ জুন একনেক সভায় অনিবন্ধিতদের শুমারির প্রকল্পের জন্য অর্থ অনুমোদন করা হয়।

এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ও কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মায়ানমার। তবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের জটিলতায় প্রক্রিয়াটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। প্রথম পর্যায়ে কুতুপালং ও নোয়াপাড়া উদ্বাস্তু শিবির থেকে দুই হাজার ৪১৫ জনকে প্রত্যাবাসনের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে দেশটি।

এদিকে, কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠ্যাঙ্গারচর এলাকায় নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এই বিষয়ে ওই এলাকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হলে হাতিয়ার ঠ্যাঙ্গার চরাঞ্চলের ৫০০ একর জায়গার প্রস্তাব পাঠান জেলা প্রসাশক বদর মুনির। তবে বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে বলে জনিয়েছে সরকারি সূত্র।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
জেপি/জেডএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।