ঢাকা: জাতিসংঘের পলিসি লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে পরিবেশ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থে’ ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক অচিম স্টেইনার এই খবর জানিয়ে বলেছেন, ‘‘বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনীমূলক নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে জলবায়ূ পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর সে কারণেই এই পুরস্কার। ”
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনও বাংলানিউজকে এই পুরস্কার অর্জনের খবর নিশ্চিত করেন।
ড. মোমেন বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অর্জন আগে থেকেই জাতিসংঘে প্রশংসিত। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতরে বাংলাদেশের অর্জনগুলো আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দিকগুলো তুলে ধরে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তারই ভিত্তিতে নেতৃত্বের ক্যাটেগরিতে এই চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ”
ড. মোমেন আরও জানান আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) একটি পুরস্কারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত হয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে ওই ক্যাটেগরিতেও বাংলাদেশ পুরস্কৃত হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কারণেই এই পুরস্কারটিও পেতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারের সাইটেশনে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান ২০০৯’ এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচির অগ্রগামী বাস্তবায়নকারী এবং অভিযোজন নীতির স্বপক্ষের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম উন্নয়নশীল দেশ যেখানে এ ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিল ব্যবহারে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ তহবিলে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনকে দেশে জাতীয় অগ্রাধিকার ইস্যু এবং একইসঙ্গে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে জোরালো ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সেপ্টেম্বরের শেষভাগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিসি) এবং ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনের অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ
চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ বার্ষিক সম্মাননা। পরিবেশ বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। পলিসি, বিজ্ঞান, ব্যবসা এবং সুশীল সমাজ এই ৪টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পূর্ববর্তী পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নেতা-নেত্রীসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা রয়েছেন যাদের নেতৃত্ব এবং কর্মকাণ্ড একটি টেকসই বিশ্ব সৃষ্টির এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য কাজ করেছে। ৪টি ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস এর মতে, বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে পেরেছে। দেশটি ইতোমধ্যেই এর ক্ষতিকর প্রভাবের কুফল ভোগ করছে এবং প্রায়শঃই সবচেয়ে দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এই বিরূপ প্রভাবের প্রধান শিকার।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য উদাত্ত আহ্বান হচ্ছে এখনই পদক্ষেপ নিন। ’
জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতের কোন সমস্যা নয়, বর্তমানের সমস্যা, আর তা এখনই মোকাবেলা করতে হবে, এই প্রত্যয় নিয়েই কাজ করে চলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
জেডএস/এমএমকে