ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মন্ত্রী মহসিন আলী আর নেই

মরদেহ আসছে মঙ্গলবার, বুধবার দাফন শাহ মোস্তফা মাজারে

মো. মাহবুবুর রহমান রাহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
মরদেহ আসছে মঙ্গলবার, বুধবার দাফন শাহ মোস্তফা মাজারে

মৌলভীবাজার: বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মরদেহ সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় দেশে আনা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মন্ত্রীর ছোট ভাই সৈয়দ সলমান আলী বাংলানিউজকে জানান, বুধবার সকাল ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনে তার প্রথম নামাজে জানাজা শেষে মন্ত্রীর মরদেহ মৌলভীবাজার শহরের দর্জিরমহল এলাকায় তার বাড়িতে আনা হবে।

সেখানে জানাজা শেষে স্থানীয় শাহ মোস্তফা মাজারে তার মরদেহ দাফন করা হবে।

সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে মন্ত্রীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

উল্লেখ্য, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মন্ত্রী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মারা যান তিনি।

সৈয়দ মহসিন আলী তিন মেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সৈয়দ মহসিন আলীর বাবা সৈয়দ আশরাফ আলী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তার মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে কলকাতা যান আশরাফ আলী। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল বাড়ি। সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মহসিন আলী। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে মহসিন আলী সবার বড়।  

দর্জিরমহল এলাকায় থাকা তার বাড়ির লোকজন জানান, জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রীর প্রথম জানাজার নামাজ হবে। তারপর নিজ এলাকার শাহ মোস্তফা মাজারে তার দাফন সম্পন্ন হবে। তবে মৃতদেহ কখন দেশে আনা হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি তারা।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ তার মৌলভীবাজার শহরের দর্জিরমহল এলাকার বাড়িতে ছুটে আসছেন। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে।

মন্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহিদ এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ ফিরুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান, পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ শাহবুউদ্দিন, জাসদ সভাপতি এম এ হক, প্রেসক্লাবে সভাপতি এম এ সালাম প্রমুখ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের তাড়ণায় ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধচলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী।   তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও সৈয়দ মহসিন আলীর ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

৬৪ সালে তিনি ছিলেন সিলেট বেতার কেন্দ্রের একজন শিল্পী ও বাংলাদেশ টাইমসের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি। তিনি প্রথমে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ ও পরে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মহসিন আলী ১৯৭৫-৯০ পর্যন্ত রেডক্রসের সেক্রেটারি ছিলেন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার-রাজনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির শক্তিশালী নেতা প্রয়াত সাইফুর রহমানকে ৩৬ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। সে সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হন তিনি। এরপর ১২ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাকে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪ প্রদান করে এবং হ্যালো কলকাতা নামে কলকাতা ভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাকে নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪ পুরস্কারে ভূষিত করে।

তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। কলকাতার সেন্টজেভিয়ার্স স্কুল থেকে জুনিয়র কেম্রিজ ও সিনিয়র কেম্রিজ পাস করেন। পরে বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন অধ্যয়নের পর আবারও কলকাতা ফিরে যান ও ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন।

স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পর পর তিন বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এসআই/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।