ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মরেনি কেউই, তবু লাশ খুঁজে হয়রান সংবাদ কর্মীরা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
মরেনি কেউই, তবু লাশ খুঁজে হয়রান সংবাদ কর্মীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বেলা একটা। ঢাকার সংবাদ ভিত্তিক দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের একটিতে ব্রেকিং, অন্যটিতে সদ্য সংবাদ।

‘সাভারে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে গরু নিলামকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, দুই সাংবাদিকসহ আহত ১০’।

মুহূর্তে নড়েচড়ে বসলো অন্যরা। মোবাইলে ফোনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো খবরটি। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেলো, ১০ জন আহত হওয়া তো দূরের কথা, দুজন সামান্য আর গুরুতর আহত একজন। কারো মৃত্যুর প্রশ্নই আসে না। এভাবেই সাভারে কল্পিত লাশের সন্ধানে সোমবার দুপুর কাটলো সংবাদমাধ্যম কর্মী আর গোয়েন্দাদের।

ঘটনা দুপুর সাড়ে ১২টার। ঘটনাস্থল সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান(বিএলআরআই)। গবেষণা কাজে ‘অপ্রয়োজনীয়’ কিছু ষাঁড়ের নিলাম ডেকেছে কর্তৃপক্ষ। একটি জিপ গাড়িতে চেপে বড়ভাই মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে সেখানে যান রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা।

নিলামে প্রতিদ্বন্দ্বী অংশগ্রহণকারী ভেবে হঠাৎ করেই লাঠিসোঠা নিয়ে তারওপর চড়াও হয় একদল যুবক। তারা বেদম প্রহার করে তাকে।

জিপ গাড়িটির পেছনেই ছিলো নাজমুলের গাড়ি। ওই গাড়ির চালক শরিফ দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, নিলাম স্থলে পৌঁছামাত্রই দেখি নাজমুল মামাকে গণপিটুনি দিচ্ছে। আমার সঙ্গে গাড়িতে থাকা রাসেলসহ আমি মামাকে রক্ষার্থে ছুটে যেই। আমরা তাদের ধাওয়া করলে পেছন থেকে আরেকটি গ্রুপ আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমি ও রাসেল আহত হই।

ঘটনা বলতে এটুকুই। কিন্তু মূহৃর্তেই তেজগাঁওয়ের সাতমাথার কাছের একটি ও বাংলামোটরের কাছের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়-সাভারে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে গরু নিলামকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, দুই সাংবাদিকসহ আহত ১০’। |

খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নিলামস্থলে। নিহতের খবর শুনে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কর্মীরাও ছুটে যান সেখানে।

সেখানকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানে তো কোন ঘটনাই ঘটেনি, আর আপনারা নিহতের খবর প্রচার করলেন! আপনাদের ওপর মানুষের বিশ্বাস থাকবে কি করে!

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, যাকে মারধর করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি তার নাম নাজমুল হুদা। তিনি সাভার পৌরসভার গেন্ডার এলাকার মৃত আদম আলীর ছেলে। দুই সাংবাদিক এলো কোত্থেকে!

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, সিন্ডিকেট করে কম দামে পশু নিলাম করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। একই ধরনের শার্ট গায়ে থাকায় দুর্বৃত্তরা ‘মহাপরিচালক’ ভেবে আমাকে পিটুনি দেয়।

কিন্তু নাজমুল হুদার এই বক্তব্যকে হাস্যকর অবিহিত করে ড. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এটা আষাঢ়ে গল্প।

এদিকে সংঘর্ষে মৃত্যুর খবরে গণমাধ্যম কর্মীদের পাশাপাশি তৎপর হয়ে উঠেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।

তবে যে নাজমুল হুদাকে পিটুনির সংবাদ ঘিরে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একজনের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হলো তাকে দেখা গেলো স্বাভাবিক, শান্ত। লাশের সন্ধানে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‍আর সব মিডিয়া কর্মীর সঙ্গে লাশের সন্ধান করছেন তিনিও।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার এক দৈনিক পত্রিকার সাভার প্রতিবেদক গোবিন্দ আচার্য বাংলানিউজকে বলেন, যে ধরনের সিরিয়াস ঘটনা শুনে ছুটে আসলাম, এখন তো এসে দেখি তার কিছুই না। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞান হীন সাংবাদিকতা আমাদের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্ন বিদ্ধ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।